সমাজে এখনও দুর্নীতি আছে, তথ্যপ্রযুক্তি এটা রোধে কার্যকর- আইসিটি ওয়ার্ল্ড-১২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সমাজে এখনও দুর্নীতি আছে। তবে ভূমি ব্যবস্থাপনা, পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের মাধ্যমে বিরাজমান দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব।
এই দুর্নীতি প্রশমনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এ জন্য বাজেটে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) আয়োজিত বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড-১২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচদিন ধরে চলবে এই কম্পিউটার মেলা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও দুর্নীতি আছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে বিরাজমান দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, কেন ভূমি ব্যবস্থাপনা, পুলিশ ও আদালতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলি। কারণ এসব খাতে দুর্নীতি বিদ্যমান। আর তথ্যপ্রযুক্তিতে কাজ করলে তা স্বচ্ছ হয়। ফলে দুর্নীতি বন্ধ করা সহজ হবে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সরকার বেশ সফল দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হয়েছে, ই-টেন্ডারিং চালু হয়েছে, শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এজন্য বাজেটে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সরকার এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য গাজীপুরে একটি আইসিটি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট সেবা দ্রুত করার জন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্তির সব কাজ শেষ হয়েছে। তবে থ্রিজি প্রযুক্তি চালু করতে সরকারের দেরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর কারণ মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সুষ্ঠু সমঝোতায় পৌঁছতে না পারা।
কম্পিউটার সমিতির পরিচালক মোস্তাফা জব্বার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা, অর্থ ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। তবে ভূমি ব্যবস্থাপনায় এখনও তথ্যপ্রযুক্তির সফল প্রয়োগ সম্ভব হয়নি। ভূমি খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, তা না হলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। যেমন থ্রিজির বেলায় চার বছর পিছিয়ে পড়েছি আমরা। এতে সরকারেরও হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
বিসিএস সভাপতি ফয়েজউল্লাহ খান বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা তার স্বীকৃতিও দিয়েছে। তবে আমরা মার্কেটিংয়ে পিছিয়ে আছি। এখন সময় দেশকে ব্র্যান্ডিং করা। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ভূমিকা রাখার ওপর জোর দেন তিনি। আইসিটি খাতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া এবং সেলস ভ্যাট শূন্যে নামিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সমিতির মহাসচিব শাহিদ উল মুনীর ও মেলার প্রধান স্পন্সর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএস তাবরেজও বক্তব্য রাখেন।
জানা গেছে, পাঁচদিনব্যাপী মেলার সেøাগান হচ্ছে, ‘দিনবদলের দীক্ষা, প্রযুক্তি আর শিক্ষা।’ এবারের মেলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৫২টি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলায় রয়েছে ৯৫টি স্টল ও ১৫টি প্যাভিলিয়ন। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। এছাড়া মেলায় থাকছে সেলিব্রেটি শো, যাদু প্রদর্শনী, কুইজ, ডিজিটাল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০ টাকা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীরা টিকেট ছাড়াই ঢুকতে পারবে। এদিকে প্রদর্শনী উপলক্ষে আজ বুধবার বিকাল ৩টায় রয়েছে ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং ও ওপেন সোর্স : অবারিত ভবিষ্যত’ শীর্ষক সেমিনার।

No comments

Powered by Blogger.