ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ার মতোই ঘটনা তবে সংঘাত সমাধান নয়: প্রণব

ভারতের নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার ছাত্রীর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। গত সোমবার রাতে তাঁর আরও রক্তক্ষরণ হয়েছে। বীভৎস ওই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেন, এটি ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ারই মতোই ঘটনা।
তবে সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংঘাত কখনই সমাধান হতে পারে না।
গতকাল মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে মতিলাল নেহরু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমএনএনআইটি) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্য সুভাষ টোমার (৪৭) গতকাল মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন। গত রোববার ইন্ডিয়া গেটে দায়িত্ব পালনকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন তিনি। এরপর তাঁকে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় দুদিন কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়।
পুলিশ সদস্যের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘এই তরুণ পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে আমি সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে তরুণদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।’
দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভগত বলেন, সোমবার রাত থেকে সুভাষের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ দিল্লিতে উত্তরখণ্ডের ২৩ বছর বয়সী ওই ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। এরপর ওই ছাত্রী ও তাঁর ছেলেবন্ধুকে নৃশংসভাবে মারধর করে দুর্বৃত্তরা চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মেয়েটির চিকিৎসা চলছে।
চিকিৎসকেরা গতকাল জানান, জীবাণু সংক্রমণের কারণে সোমবার রাতে মেয়েটির দেহে আরও রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে তাঁর প্লেটলেট সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজার হয়েছে, যা রোববার ছিল মাত্র ১৯ হাজার। তাঁরা জানান, একজন সুস্থ মানুষের প্রতি মিলিলিটার রক্তে প্লেটলেটের স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ হয়।
দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার তাজ হাসান বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নবগঠিত দুর্নীতিবিরোধী রাজনৈতিক দলের এক সদস্যসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে পরদিন তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। এ ছাড়া ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের দুই সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শিলা দীক্ষিত-পুলিশ মুখোমুখি: গণধর্ষণের শিকার মেয়েটির জবানবন্দি রেকর্ড করা নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিত ও দিল্লি পুলিশ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে দিক্ষিত অভিযোগ করেন, মেয়েটির জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা ‘হস্তক্ষেপ’ করেছেন। তাঁরা মেয়েটির জবানবন্দির ভিডিও রেকর্ডিংয়ে বাধা দেন। এমনকি নিজেদের তৈরি প্রশ্নপত্র দিয়ে মেয়েটির জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাহী হাকিমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
তবে দিল্লি পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো গোপন এ চিঠির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভাগত বলেন, ‘গোপন এ চিঠিটি গণমাধ্যমের হাতে কীভাবে পৌঁছাল, তার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের তদন্ত হবে এবং একজন নারী কর্মকর্তার নেতৃত্বেই এ তদন্ত হবে। সূত্রটি আরও জানায়, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। বিবিসি ও পিটিআই

No comments

Powered by Blogger.