জিয়াউর রহমানের তবুও পর্দা ছিল by আবদুল মান্নান

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রথমে সামরিক শাসক পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কী ছিলেন না তা একটি রাজনৈতিক কুতর্ক। বঙ্গবন্ধু সরকারই তাঁকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে বীরত্বের জন্য বীর উত্তম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সামরিক বাহিনীতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব। তার উপরে বীরশ্রেষ্ঠ সাতজন পেয়েছিলেন যাঁরা সকলেই যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছেন। তর্ক হতে পারে জেনারেল জিয়া ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে যিনি মেজর জিয়া ছিলেন তিনি কী দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন নাকি অনেকটা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে, বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকাতে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। মনে রাখতে হবে মেজর জিয়া ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশে মালবাহী জাহাজ এমভি সোয়াত হতে বাঙালীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য পাকিস্তানী সৈন্যদের জন্য অস্ত্র খালাসে ব্যস্ত ছিলেন। কারণ চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিকরা এই অস্ত্র খালাসে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। জিয়া যখন সেই রাতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বাদামতলি এলাকায় জনগণ কর্তৃক ব্যারিকেড সরিয়ে বন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন কর্নেল অলি (তখন তিনি একজন ক্যাপ্টেন) এসে খবর দেন ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে । কর্নেল অলির এই কথা শুনে জিয়া চট্টগ্রামের ষোলশহরে অবস্থিত তাঁর দফতর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলে ফিরে আসেন এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই সব কথা কর্নেল (অব) অলি, বীর বিক্রমের বই জবাড়ষঁঃরড়হ, গরষরঃধৎু চবৎংড়হহবষ ধহফ ঞযব ডধৎ ড়ভ খরনবৎধঃরড়হ রহ ইধহমষধফবংয-বর্ণিত আছে। এটি তার পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য রচিত অভিসন্ধর্ব। ষোলশহরে না থেকে জিয়া, অলি, মেজর শওকত, শমশের মোবিন চৌধুরী বা অন্যরা যদি এক মাইল দূরে সেনানিবাসে থাকতেন তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় তাঁরা একটি গণহত্যার শিকার হতেন। ২৬ তারিখ সকালে আমার সঙ্গে সেনানিবাস থেকে কোনমতে জীবন বাঁচিয়ে আসা দু’জন সাধারণ সৈনিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল যারা পূর্বের রাতে সেনানিবাসে নির্বাচারে বাঙালী সৈনিক ও অফিসার হত্যা দেখে অনেকটা নির্বাক হয়ে পড়েছিলেন। তাদের ষোলশহরে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। আবার কোন কোন সেনানিবাসে বেশকিছু বাঙালী অফিসার ছিলেন যাঁরা স্বেচ্ছায় পাকিস্তানীদের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বেশিরভাগ সময় ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, পথঘাট দেখিয়ে দিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছেন, বাঙালী নিধনে পাকিস্তানীদের সহযাত্রী হয়েছেন এবং এক সময় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত গিয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে অন্য বাঙালী সৈন্যদের সঙ্গে তাদের বন্দী করা হয়েছে। আবার কোন কোন বাঙালী অফিসার যুদ্ধবন্দী হিসেবে ভারত হয়ে পাকিস্তান গিয়েছেন এবং সিমলা চুক্তির পর এরা বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন; কেউ কেউ আবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণ হয়েছেন। যাদের শনাক্ত করা গেছে তাদের কয়েকজনকে অবসর দেয়া হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যাদের অবসর দেয়া হয়েছিল তাদের চৌদ্দজনকে জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পুলিশ বাহিনীতে অফিসারের চাকরিতে আত্তীকরণ করেন এবং এদের মধ্যে দু’একজন পরবর্তীকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক পর্যন্ত হয়েছেন। জিয়ার একটিই শর্ত ছিল যে, তারা কখনো তাদের নামের সঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনীর পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না। অন্তত একজন জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন, যিনি আবার ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। আর একজন আছেন, যিনি এখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি। এসব কথা আমার কোন গবেষণালব্ধ তথ্য নয়। পাকিস্তানী জেনারেলদের লেখা একাধিক গ্রন্থে এই সব পাকিস্তানী পক্ষের যোদ্ধার নানা ধরনের চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। সেসব জানার জন্য একটু ধৈর্যের প্রয়োজন।
জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া যেমন অনেকটা আকস্মিক ছিল, তার রাজনীতিতে আসাও তেমনটি পঁচাত্তর-পরবর্তী ঘটনাচক্রের ফলশ্রুতি ছিল। স্বীকার করতেই হবে, জিয়া কূটবুদ্ধিতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তিনি ঠিকই জানতেন ব্যক্তিস্বার্থে কোন্ সময় কোন্ কাজটি তাঁকে করতে হবে এখানেই তাঁর সফলতা। এদিক দিয়ে কর্নেল তাহের বা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ কিছুটা অদূরদর্শী ছিলেন। কর্নেল তাহের ভাল হোক আর মন্দ হোক সেনাবাহিনীতে একটা বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। তাঁর দুর্ভাগ্য তিনি তাঁর জন্য জিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৪ নবেম্বর খালেদ মোর্শারফ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের একটা সুযোগ পেয়েছিলন। জিয়া সামরিক বাহিনী হতে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু খালেদ মোর্শারফও তাহেরের মতো ভুল করে নিজের ক্ষমতাকে সংহত করার পরিবর্তে র‌্যাংক ব্যাজ পরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বুঝতে পারেননি, এরই মধ্যে জেলে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কোন দেশে ক্ষমতার পালাবদল হলে প্রথমে যারা এই পালাবদলের হোতা তারা দেশের রেডিও-টেলিভিশনের দখল নেন এবং জনগণের উদ্দেশে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য সচেষ্ট হন। এই কাজটি খালেদ মোর্শারফ বা তাহের কেউ করার প্রয়োজন মনে করেননি; যদিও ইতিহাস সাক্ষী দেয়, দু’জনই রণাঙ্গনে জিয়ার চাইতে অনেক বড় মাপের সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। কূটচালে তারা দু’জনই তাদের এককালের সতীর্থ জিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন এবং তাদের সেই অক্ষমতার কারণে এই দু’জন অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধাকে নিজের জীবন দিতে হয়েছিল।
জিয়া ঠিকই বুঝেছিলেন, ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হলে একটি রাজনৈতিক দলের বিকল্প নেই। প্রথমে সমমনাদের নিয়ে একটি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (১৯৭৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর), পরে জাগদল এবং সব শেষে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিয়া বিএনপি গঠন করেছিলন। ফ্রন্ট বা জাগদল গঠন করার পিছনে জিয়ার মূল উদ্দেশ্যই ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা। তিনি শুধু তার এককালের সেনাপ্রধান জেনরেল আইউবের পদাঙ্ক অনুসরণ করছিলেন।
জিয়া ঠিকই জানতেন রাজনৈতিক দল গঠন করতে হলে তাঁকে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির সহায়তার প্রয়োজন হবে। বঙ্গবন্ধুর আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত মুসলিম লীগের মতো ধর্মাশ্রয়ী দলগুলোর ওপর হতে তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এই সুযোগে যে সকল অতি বামপন্থী দলসমূহ যারা গলাকাটা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তারাও বের হয়ে এসেছিল এবং অনেকেই জিয়ার নবগঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। শাহ আজিজের মতো একাত্তরের দালাল আর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর দোসররাও জিয়ার দলে নোঙর ফেলেছিলেন। তবে জিয়ার সৌভাগ্য তার জীবদ্দশায় তাকে জামায়াতের মতো যুদ্ধাপরাধীদের দলের প্রত্যক্ষ সহায়তা নিতে হয়নি যদিও তার আমলেই একাত্তরের ঘাতক শিরোমণি জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে জিয়া পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বেঁচে থাকলে হয়ত তাঁর স্ত্রীর বেগম জিয়ার মতোই জামায়াত বা অন্য যুদ্ধাপরাধীদের তার রাজনৈতিক অন্দরমহলে প্রবেশ করতে দিতেন, রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ বসাতে দিতেন অথবা তাঁর সন্তান তারেক জিয়া যেমন করে বলেন জামায়াত বিএনপি একই মায়ের দুই সন্তান ঠিক সেই কথাটিই তিনি বলতেন। সৌভাগ্য বলি আর দুর্ভাগ্য এই অপকর্মগুলো করার আগেই জিয়াকে তাঁর সহকর্মীদের হাতে করুণ মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
জিয়াও জানতেন ঠিক যেমনটি জানতেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অঙ্গীকার ঘোষণা না করলে বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা না বললে বাংলাদেশে রাজনীতি করা কঠিন। বর্তমানে তো জামায়াতও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসে সভা সমাবেশ আর মিছিল বের করে। অর জিয়া তো একাত্তরের সৃষ্ট। তিনি তো মুক্তিযুদ্ধকে বাঁধ দিয়ে রাজনীতি করার কথা চিন্তাই করতে পারেন না যদিও তার এই চিন্তার আন্তরিকতা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন তোলা যায়। তিনি তার দলে শাহ আজিজের মতো মানুষকে নিয়েছিলেন ঠিক কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল মীর শওকত, কর্নেল অলি, মেজর হাফিজ, কর্নেল আকবর হোসেন বা ব্যারিস্টার মওদুদের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়েছিলেন। আর দল ছিল একটি অদ্ভুত রসায়নসিক্ত সংগঠন অনেকটা তেলে জলে মিশানোর মতো। তবে যেহেতু সকলে তার পতাকাতলে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সমবেত হয়েছিলেন তারা সকলেই নিজেকে এই বিচিত্র পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন।
গোড়া থেকেই বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক পুঁজি ছিল ভারত বিরোধিতা। এটির প্রধান কারণ ছিল স্বাধীনতার পর হতেই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ যথার্থভাবে মনে করেছে বাংলাদেশের প্রতি ভারত যে ধরনের বন্ধুসুলভ আচরণ করার কথা ছিল ততটুকু তারা করেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বেশ ঔদার্যের পরিচয় দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের মানুষ অনেক সময় বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের এই অনুভূতি বিএনপি বেশ কাজে লাগিয়েছে। তবে এটাও ঠিক দীর্ঘ চল্লিশ বছরে পরিস্থিতি পূর্বের যে কোন সময়ের চাইতে বর্তমানে অনেকটা উন্নত হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেমনটা তৃণমূল হতে উঠে এসেছে বিএনপির ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি। এটির জন্ম সামরিক ছাউনিতে এবং চেষ্টা করা হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে যদিও কাজটি তেমন সহজ নয়। সুতরাং বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকার জন্য সব সময় শর্টকাট পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে চমক সৃষ্টি করা হয়েছে। বেগম জিয়া ভারতে গিয়ে বলে এসেছেন এখন হতে তাঁর বিরোধিতার নীতির পরিবর্তন ঘটবে। তিনি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে আর জঙ্গীবাদের উত্থান হতে দেবেন না যেমনটি আগেরবার ঘটেছিল। আবার এদিকে জামায়াতকে আরো কাছে ঠেনে নিয়ে এসে হরতালের নামে তাদের সকল ধ্বংসাত্মক কাজকে জায়েজ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখ তিনি এবং তাঁর প্রধান মিত্র জামায়াত মিলে ঘোষণা দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের ঢাকায় সংবর্ধনা জানাবেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকটি প্যাডসর্বস্ব দল ছিল। এই তথা কথিত সংবর্ধনার সুযোগ নিয়ে জামায়াতের ক্যাডাররা সারা ঢাকার জনগণের বিরুদ্ধে সূর্যোদয়ের সঙ্গেই সহিংস যুদ্ধ শুরু করেছিল। এ বছর ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি এমন আর একটি সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা ও দলীয় নেতা শাহজাহান ওমর বীর উত্তমকে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার ‘তথাকথিত’ জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাঁর এই ‘তথাকথিত’ শব্দটি নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ইন্টারনেটের নানা ব্লগে প্রশ্ন করেছেন শাহজাহান ওমর ‘তথাকথিত জামায়াত বা যুদ্ধাপরাধী’ বলতে কী বোঝান? তাহলে কী তিনি মনে করেন না জামায়াত আর যুদ্ধাপরাধ সমার্থে ব্যবহার করা হয়? তিনি ঠিকই জানেন কিন্তু কর্তার ইচ্ছাই কর্ম বলে একখান কথা আছে না। তারা ঠিকই বুঝেন সামনে সাধারণ নির্বাচন। সুতরাং জামায়াত বিষয়ে তাদের একটা ফয়সালায় আসতে হবে। জামায়াতের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবেন আবার বলবেন বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাস করে তা কেন জনগণ বিশ্বাস করবে। জনগণ নানা কারণে আওয়ামী লীগের ওপর বিরক্ত হতে পারে তার অর্থ এই নয় যে, তারা দলে দলে বিএনপির পিছনে কাতারবন্দী হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বেগম জিয়া তার বক্তৃতায় বলেছেন আগামীতে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় গেলে দেশের মানচিত্র বদল হয়ে যাবে। এই বক্তব্য দ্বারা তিনি কী আবার পূর্বের ভারত বিরোধিতায় ফিরে গেলেন কারণ মানচিত্র বদলানোর একটাই অর্থ তা হচ্ছে বাংলাদেশের কিছু অংশ ভারতকে দিয়ে দেয়া। ঠিক কোন একটা কথা তিনি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রাক্কালে। এই চুক্তি করলে নাকি ফেনি নদী পর্যন্ত ভারতের অংশ হয়ে যাবে। আসলে সার্বিক বিচারে এটি মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এখন জামায়াতকে নিয়ে নানা পেরেশানির মধ্যে আছে। জামায়াত এখন বিএনপির জন্য সিন্দেবাদের সেই বুড়োর মতো কাঁধে চড়ে বসেছে। তাকে নামানো তেমন একটা সহজ কাজ নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্ম একটি বিভ্রান্তি আর ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে আর সেই অবস্থা হতে দলটি এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি।

লেখক : কলামিস্ট ও শিক্ষাবিদ

No comments

Powered by Blogger.