উৎসব আনন্দে উদ্্যাপিত হলো বড়দিন

আজ শুভ বড়দিন ভাই, আজ শুভ বড়দিন। খ্রিস্ট যিশু এলে ভবে, ছেড়ে স্বর্গের সিংহাসন। চেয়ে দেখ বেথলেহেমে গোয়ালঘরে মেরী কোলে, যাবপাত্রে আছেন শুয়ে পাপীদের মুক্তির কারণ। বেথলেহেমের গরিব কাঠুরিয়ার গোয়ালঘরেই জন্ম হয়েছিল খ্রীস্টান ধর্মের প্রথপ্রদর্শক যীশুখ্রিস্টের।” মঙ্গলবার যীশুখ্রিস্টের জন্মদিনে প্রার্থনা সঙ্গীতের মাধ্যমে এভাবে তাকে স্মরণ করা হলো মিরপুরে শাহআলী বাগের সেভেনডে’স এভেনটিস গির্জায়।
বড়দিন উপলক্ষে সকাল থেকে কয়েকশ’ খ্রীস্টান অনুসারী এ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন। প্রার্থনা সঙ্গীত পরিচালনা করেন গির্জার পুরোহিত বেনেডিক বড়। সকাল ৯টা থেকে বড়দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই এ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।
বড়দিন উপলক্ষে এখানে তৈরি করা হয়েছিল দুটি ক্রিসমাস ট্রি। বিজলী বাতি আর বিভিন্ন রঙের কাজগের ঝালর দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। পুরোহিতের সহযোগি প্রদীপ বল্লব বলেন, মূলত বড়দিন উপলক্ষে নান্দনিক সৌন্দর্য তৈরি করতেই মূলত ক্রিসমাস ট্রি তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়া বড়দিনে শিশুদের আনন্দ দিতে সাজানো হয় সান্তাক্লজকে। সান্তাক্লজ শিশুদের বড়দিনের বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকেন। সান্তাক্লজের আগমনের পরই গির্জায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। এরপর আগত অতিথিদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
রাজধানীর প্রতিটি গির্জায় বড়দিনের প্রধান অনুষ্ঠান ছিল প্রার্থনা সভা। এদিন উপলক্ষে গির্জাগুলো বিশেষভাবে সাজানো হয়। সকাল থেকে শুরু হয় প্রার্থনা সভা। হাজার হাজার খ্রীস্টানঅনুসারি প্রার্থনা সভায় যোগ দেন। খ্রীস্টান অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে যিশুখ্রিস্ট মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাঁর জন্মদিনের আনন্দবার্তা মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য এ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি যে মুক্তির বাণী প্রচার করে গেছে, তাও সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া বড়দিনে অন্য আয়োজনের মধ্যে ছিল প্রতিটি গির্জায় যিশুখৃষ্টের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান। তিনি বেথলেহেমের গোশালায় জন্ম নিয়েছিলেন বলে প্রতিটি গীর্জায় তৈরি করা হয় গোশালা। সেখানে দেখানো হয় কুমারী মাতা মেরী কোলে শুয়ে রয়েছেন শিশু খ্রিস্ট। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন গির্জা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি গির্জায় তৈরি করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বড়দিন আনন্দময় করতে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি। ফার্মগেটের জপমালা রানীর গির্জায় গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল হলঘরে প্রার্থনা সভার এক কোণে তৈরি করা হয়েছে গোশালা। বাইরে হল ঘরে প্রবেশের মুখেই ক্রিসমাস ট্রি তৈরি করা হয়েছে। মিরপুরের ক্যাথেলিক গির্জার প্রবেশ মুখেই তৈরি করা হয়েছে গোশালা। এছাড়াও যিশুখ্রীস্টের জন্মদিনের কাটা হয় জন্মদিনের কেক। এছাড়া গির্জায় গির্জায় মানুষের ঢল নামে।
মূলত দুটি পর্বে পালিত হয়ে থাকে বড়দিন। প্রথম পর্বে প্রতিটি গির্জায় চলে প্রার্থনা সভা। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ প্রার্থনা সভা। এরপরেই শুরু হয় পারিবারিক আচার অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতেই বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। বাড়িতে বাড়িতে চলে কীর্তন আর পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়। মিরপুর ক্যাথলিক গির্জার সদস্য লুইস বিশ্বাস বলেন, বড়দিন উপলক্ষে প্রতিটি খ্রীস্টান পরিবারের আগেই নতুন জামাকাপড় কেনা হয়। দুপুরের প্রত্যেকের বাড়িতে পিঠাসহ তৈরি করা হয় বিশেষ খাবার। বিকেলে পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাসাবাড়িতে চলে কীর্তন আর শুভেচ্ছা বিনিময়।
মঙ্গলবার বড়দিন পালন করা হলেও মূলত সোমবার রাত থেকেই শুরু হয় বড়দিনের উৎসব। প্রায় প্রতিটি গির্জায় রাত ৯টায় থেকে ১১টায় পর্যন্ত চলে প্রার্থনা সঙ্গীত আর আলোচনাসভা। মঙ্গলবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থনা। প্রার্থনা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে প্রতিটি গির্জায় বিশেষ অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। আহ্বান জানানো হয় শক্রকে ভালবাসতে। আর সবার মাঝে ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে। এতে বলা হয় যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে। তাই আজকের দিনের সবার চাওয়া শান্তি ও ভালবাসার পৃথিবী। যাতে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। একতা, মিলন আর ভ্রাতৃত্ব হবে মূল কথা। সবাই হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।
বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর হোটেলগুলোতে ছিল বিশেষ আয়োজন। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হোটেলগুলো। সকাল থেকে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে আসতে থাকেন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন। সব শিশুই আনন্দে মেতে ওঠে। শিশুরা সবাই মিলে কেক কাটে। সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর সোনরাগাঁও, রূপসী বাংলা, ওয়েস্টিন হোটেলসহ সবগুলো হোটেলে উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের অনুষ্ঠান। হোটেলগুলোতে বড়দিনের আয়োজন ছিল মূলত শিশুদের নিয়ে। তারা সান্তক্লজকে ঘিরে নানা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। বসানো হয় আলোকসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি। আর সান্তাক্লজ ঘুরে ঘুরে শিশুদের মাঝে চকোলেট আর উপহার বিতরণ করে। সোনারগাঁও হোটেলে পুল সাইডে আয়োজন করা হয় ক্রিসমাস পার্টি। অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, জাদু, পুতুল নাচ, বিভিন্ন পশু নিয়ে ছোট চিড়িয়াখানা, পিয়ানো মিউজিক, নাগরদোলা, বানর খেলা। পাশাপাশি বড়দিনের বিশেষ কেকসহ মুখরোচক রকমারি খাবারের আয়োজন করা হয়। রূপসী বাংলা হোটেলে শিশুদের জন্য ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন করা হয়। লবিতে বসানো হয়েছে বড় ক্রিসমাস ট্রি। শিশুরা নেচে গেয়ে মেতে ওঠে আনন্দে। এছাড়া পুতুল নাচ, পাজেল, বিভিন্ন গেম, গানের পরিবেশনা, র‌্যাফেল ড্র ইত্যাদির আয়োজনও করা হয় এ হোটেলে। বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ মেন্যুতে তৈরি দুপুরের খাবারের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই আয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.