স্বপ্নের সঙ্গে পথ চলা by হারুনুর রশিদ শাহীন

রাজীব। মেধাবী ছাত্র। পরীক্ষার ফলাফলও ভালো। সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই ভালোবাসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছেন। ভেবেছিলেন রেজাল্ট ভালো হওয়ায় খুব সহজেই কাজের সন্ধান পাবেন। মোট কথা এ ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন। তাই ছাত্র অবস্থায় ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাতেন না।


অন্য বন্ধুরা যখন ক্যাম্পাসে আড্ডার ফাঁকে ক্যারিয়ার নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন তখন তার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে দেখা গেল, পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলেও চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিতে দিতে পাঁচটি বছর চলে যায় তার। কোথাও চাকরি হয় না। অথচ তার বন্ধু ও সহপাঠীদের অনেকের ভালো চাকরি হয়ে যায়। এরও মাস চারেক পর রাজীবের একটি প্রাইভেট ফার্মে অনেক কষ্টে চাকরি হয়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এটি শুধু রাজীবের ক্ষেত্রেই নয়_ অনেক শিক্ষার্থীর জীবনের গল্পই প্রায় এ রকম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ। কিন্তু ছাত্রজীবনেই একটু কৌশল অবলম্বন করলে এ তিক্ত অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই কমে যেত।
স্বপ্ন জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য মানুষের নিরন্তর ছুটে চলা। এই ছুটে চলার পথেই মানুষকে সহস্র বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এক সময় তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের চূড়া স্পর্শ করে।
সফলরা জীবন সম্পর্কে জানতেন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়েছেন। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এ ব্যাপারে উদাসীন না থেকে ঠাণ্ডমাথায় ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে সময় থাকতেই।
সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে যাওয়া ...
পরিকল্পনা করাটাও কিন্তু অনেকটা কঠিন। এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না কীভাবে পরিকল্পনা করতে হয়। একজন মানুষ প্রতিদিনই নানা কারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারে। তবে তা হবে খুব সামান্য। কারণ প্রতিদিনই এমন কঠিন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয় না যে সিদ্ধান্তহীনতার যন্ত্রণা পোহাবে। বিষয়টা আপাতদৃষ্টিতে একটু জটিল হলেও এ জন্য ব্যক্তির সামর্থ্য, অবস্থান ও সমাজের চাহিদাকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করতে হয়। এক্ষেত্রে নিজের ভালোলাগার কথাটাও ভুলে গেলে চলবে না। নিজের ভালোলাগাকেই প্রাধান্য দিতে হবে বেশি। মনে রাখতে হবে, একটি ভালো পরিকল্পনা যে কোনো কাজ অর্ধেক শেষ করার সমান।
সময়ের সঙ্গে থাকা ...
নিজেকে জানার মধ্য দিয়েই জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। কেননা বর্তমান যুগটাই হচ্ছে প্রতিযোগিতার। সব ক্ষেত্রেই চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। আর প্রতিযোগিতায় নিজেকে একটু আলাদাভাবে প্রকাশ এবং প্রমাণ করতে চাইলে থাকতে হবে সময়ের সঙ্গে। সাম্প্রতিক বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে কম্পিউটার ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর। অনেক বিজ্ঞজনই মনে করেন, 'প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত ছাত্রজীবনেই কর্মজীবনের পরিকল্পনা করে ফেলা। কারণ, এই সময়ে কর্মজীবনের পরিকল্পনা করতে না পারলে স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনা শেষে জব মার্কেটে ঢুকতে গেলে অনেক বেগ পেতে হয়। এদের মধ্যে অনেকে আবার কোথাও কোনো চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে। যা খুবই দুঃখজনক। তাই পড়াশোনা করতে করতেই নিজের ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারলে আগামী দিনগুলো অবশ্যই উজ্জ্বল হবে।'
সাফল্য আপনার নিজের অধিকার। এ অধিকার অর্জিত হয় অনেক শ্রমে, অনেক ত্যাগে। সাফল্যের পথে রয়েছে অজস্র বাধা, আছে মরীচিকা। পথ চলতে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন চোরাবালিতে। মোটকথা তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝে সেরা প্রমাণ করতে হবে নিজেকে। আর তাই আত্মবিশ্বাসে অটুট থেকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে নিজের যে টুকু মেধা আছে তার সঠিক ব্যবহার দিয়েই। সমস্যায় পড়লেই সমাধানের জন্য উৎকণ্ঠিত হবেন না। সমস্যাকে তার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছেড়ে দিন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যে নতুন সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। মনে রাখতে হবে জীবনে ব্যর্থতার প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব। ব্যর্থরা অবচেতনভাবে ব্যর্থতার সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করে। সচেতনভাবে সাফল্যের সঙ্গে একাত্ম হলেই সাফল্য আপনার দিকে আকৃষ্ট হবে।

No comments

Powered by Blogger.