যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন-অগ্রাধিকারে আসুক রেলওয়ে খাত

রেলওয়ে দফতর দেখভাল করার জন্য অভিজ্ঞ ও দক্ষ রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের 'পেটের ভেতর থেকে বের করা হলেই' রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের উন্নতি ঘটবে_ তেমন আশা না করাই ভালো।


দেশব্যাপী রেললাইন সম্প্রসারণ, রাজধানীর সঙ্গে আশপাশের জেলাগুলোর কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু, নতুন বগি ও ইঞ্জিন সংগ্রহ, মালপত্র পরিবহন সুবিধা বাড়ানো, নতুন আইসিডি ইয়ার্ড নির্মাণ_ রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের জন্য এসব হচ্ছে স্বপ্নের প্রকল্প। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। একই সঙ্গে চাই অর্থের জোগান। কিন্তু বহু বছর ধরেই রেলপথ নয়, বরং সড়কপথই হয়ে রয়েছে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার। এ কারণেই স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে গোটা বাংলাদেশ অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্কে চলে এলেও কমেছে রেলপথের পরিমাণ। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে যারা স্বীকৃত_ যেমন বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক_ তারাও সড়কপথের উন্নয়নকেই গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। এ মনোভাবের পরিণতিতে প্রকৃতির অপার দান নৌপথকেও করা হয়েছে অবহেলা। অথচ এ পথে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন ব্যয় সড়ক ও রেলপথের তুলনায় ঢের কম। শনিবার ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে নতুন এক জোড়া কমিউটার ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনকালে রেলমন্ত্রী 'দীর্ঘদিনের অবহেলিত রেলপথে গতিসঞ্চারের কার্যক্রম' শুরু করার দাবি করেছেন। নতুন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি হওয়ার পর রেল সার্ভিস আরও জনমুখী হবে_ এমন অঙ্গীকারও রয়েছে তার। তার এ মনোভাবকে আমরা স্বাগত জানাই। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সরকারের নীতিগত অবস্থান চূড়ান্ত করা। 'টাকার অভাবে থমকে আছে রেলের উন্নয়ন প্রকল্প'_ রোববার সমকালের এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, গত দুই দশকে যোগাযোগ খাতে যে বরাদ্দ ও বৈদেশিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে তার মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে রেলওয়েকে। অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আনা না হলে রেলওয়ে খাত নামকাওয়াস্তেই বরাদ্দ পাবে এবং তা দিয়ে কোনো স্বপ্নই পূরণ হওয়ার নয়। আমরা জানি, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। প্রধান প্রধান সড়ক-মহাসড়কের এবড়ো-খেবড়ো অবস্থা নিয়ে প্রতিদিনই সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রতিবেদন থাকছে। জনমনে ক্ষোভও যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রেও প্রধান অভিযোগ_ অর্থ বরাদ্দ প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম। তদুপরি রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়ম। নতুন রেলমন্ত্রী দুর্নীতির তথ্য মন্ত্রণালয়ের গোচরে আনার জন্য গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করেছেন। তার এ অবস্থান প্রশংসনীয়। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ভিজিলেন্সও থাকা চাই। তবে মূল বিষয় হচ্ছে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো। ট্রান্স এশিয়া এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর রেলওয়ে নেটওয়ার্কে বাংলাদেশ যুক্ত হলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরও কোনো কোনো দাতা সংস্থা ও দেশের সহজশর্তে ঋণ প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও রেলপথ সম্প্রসারণের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা এবং মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্র্কের সম্পূর্ণ বাইরে রয়ে গেছে। এ সেতুর কাজ শুরু হতে এখনও অনেক বাধা অতিক্রম হতে হবে বলেই ধারণা করা যায়। এর পেছনেও রয়েছে অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগ। প্রাজ্ঞ রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ বাধা অপসারণে সক্রিয় হতে পারেন। তার নিজের মন্ত্রণালয়ের বিকাশেও কিন্তু এ প্রকল্প অপরিহার্য।

No comments

Powered by Blogger.