ঐতিহ্য-আগৈলঝাড়ায় মার্বেল খেলার মেলা by কেএম আজাদ রহমান

রিশালের আগৈলঝাড়ায় ২০০ বছরের পুরনো মার্বেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল রোববার। উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়, পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, কালকিনি, গৌরনদীসহ বিভিন্ন উপজেলার হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। জানা গেছে, রামানন্দের আঁক গ্রামে আড়াইশ' বছর আগে সোনাই চাঁদের পাঁচ বছর বয়সে বিয়ে হয়।


সাত বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় ওই বাড়িতে নিমগাছের গোড়ায় পূজা-অর্চনা ও ধ্যান শুরু করেন সোনাই। তার মৃত্যুর পর ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর এ দিনটি উপলক্ষে ওই বাড়িতে বৈষ্ণবসেবা, সংকীর্তন, কবিগান শেষে সোয়া মণ চালের গুঁড়ার সঙ্গে গুড়, নারকেলসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরি
করে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তপূজা উপলক্ষে এ গ্রামে মার্বেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ খেলা সম্পর্কে স্থানীয় প্রবীণ হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, হরবিলাস মিস্ত্রী ও বুদ্ধি হালদার জানান, ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাপ-দাদারা এ খেলার (মেলা) আয়োজন করে আসছিলেন। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করে আসছি। দিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। স্থানীয়রা তাদের মেয়ে ও জামাতাকে পর্যন্ত মেলায় মার্বেল খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। মেলা উপলক্ষে চিড়া, মুড়ি, খেজুরের রস ও গুড়ের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে এলাকায়। এ বছরও মেলার প্রধান আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে মার্বেল খেলার প্রতিযোগিতা।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বসেছে মেলা। বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে মেলায় এসেছেন প্রদীপ দাস। তিনি জানান, মার্বেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে আসা সমীর বিশ্বাস, পলাশ রায়, জুয়েল সমাদ্দার, মিলন বিশ্বাস, টিটু সমাদ্দার ও মনতোষ সমাদ্দার জানান, আমরা মার্বেল খেলার মেলার কথা শুনে এ বছরই প্রথম এসেছি। ব্যতিক্রমধর্মী মেলার বাস্তপূজার প্রসাদ খেতে পেরে আমরা আনন্দিত। উপজেলার রাজিহার গ্রামের বিমল বাড়ৈর ছেলে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র বিপ্লব বাড়ৈ সারাবছর মার্বেল না খেললেও মার্বেল কেনার জন্য টাকা জমিয়ে প্রতি বছর এদিনটির অপেক্ষায় থাকে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, যুবক, যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মার্বেল খেলায় অংশ নেয়। মেলা পরিচালনার জন্য জ্যোতিষ চন্দ্র বাড়ৈকে সভাপতি করে ৩৭ সদস্যের মেলা উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি জ্যোতিষ বাড়ৈ জানান, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.