অভিমতঃ শূন্য পদ পূরণ যেন পলিসি বিক্রির মতো না হয় by এসকেএম সাইদুর রহমান

ওয়ামী লীগ ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী তার একাধিক বক্তব্যে বলেছেন, প্রতিটি পরিবারে একজন করে চাকরি দেয়া হবে। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানেই নয়, বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করে সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী গত ১০ জুলাই দেশে ৬ হাজার চিকিত্সকের পদ শূন্য আছে জানিয়ে শূন্য পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন। আবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ২৯ জুলাই সচিবালয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে এডহক ভিত্তিতে ৪ হাজার চিকিত্সক ও ৩০ থেকে ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হবে। আশা পূরণের অপেক্ষায় লাখ লাখ বেকার দিন গুনছে। সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তসাশিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেড় লক্ষাধিক পদ শূন্য রয়েছে। আর এসব শূন্য পদ পূরণে সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রশাসনকে আরও গতিশীল, যুগোপযোগী, দক্ষ, জনমুখী, সেবাধর্মী এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার জন্য নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান করতে আরও ২ লক্ষাধিক নতুন পদ সৃষ্টির চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এইচটি ইমামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে সরকারকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য।
বর্তমানে প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল ও পুলিশসহ বিভিন্ন ক্যাডারে প্রায় পঞ্চাশ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নন-ক্যাডার কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে লক্ষাধিক। তাছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মত্স্য বিভাগ, বিডিআর জওয়ানসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ঝাড়ুদার, সুইপার, মালি, দারোয়ান, ড্রাইভার, নৈশপ্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে প্রায় এক লাখ। অনুরূপ জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, সমবায় বিভাগ, বিদ্যুত্, গ্যাস, ওয়াসা, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ট্যাক্স কর্মকর্তা, করণিক, ডাক্তার, নার্স, ঝাড়ুদার, পিয়ন-দারোয়ানসহ প্রায় ৫ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। সূত্র মতে, বিগত ২-৩ বছর ধরে স্বাস্থ্য বিভাগে ১৯ হাজার ২৪৩টি পদের স্থলে কর্মরত আছে ১১ হাজার ৪৩০ জন। খালি আছে ৬ হাজার ৮১৩টি পদ। এ বিভাগে অন্যান্য অনুমোদিত পদের সংখ্যা হচ্ছে ৮৩ হাজার ৯৫৭টি। কর্মরত আছে ৭২ হাজার ১১৬ জন। খালি আছে প্রায় ১০ হাজার। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে ডাক্তারের ১২শ’ অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত আছে ৭২০ জন। খালি আছে ৪৫৪টি। সরকার যদি আন্তরিকতার সঙ্গে সহজ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলীয়করণ না করে উপরোল্লিখিত পদগুলো পূরণ করে তাহলে লক্ষাধিক বেকার যুবক হতাশামুক্ত নতুন জীবন পাবে। লক্ষাধিক পরিবার আয়ের পথ খুঁজে পাবে। অভাব মোচনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এক একটি পদ পূরণ করা মানে এক-একটি পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করার সমতুল্য। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ও বুদ্ধিমত্তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো উচিত। এজন্য যে তিনি প্রতিটি পরিবারে একজনকে চাকরি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নজরদারি থাকা দরকার। যেন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাণিজ্যকরণ না হয়, বীমার পলিসি বিক্রির মতো না হয়। একটি সুন্দর নিয়োগ প্রক্রিয়া থাকা চাই যেখানে মশা মারার জন্য কামান দাগানোর নীতি থাকবে না। গ্রেডিং বা ডিভিশনের বৈষম্য থাকবে না। বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন গ্রেড বা ডিভিশন নিয়ে পাস করেছে যা সরকারিভাবে স্বীকৃত। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই স্বীকৃতিকে মূল্যায়ন করা হয় না। শিক্ষাজীবনে যারা ভালো রেজাল্ট করবে তারা কর্মজীবনেও ভালো করবে, যারা শিক্ষাজীবনে ভালো ফল করবে না তারা কর্মজীবনেও ভালো করতে পারবে না এমন ধারণা সত্য নয়। শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল করেনি এমন অনেকে সমাজে-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে তাদের কর্মস্পৃহা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, সততা, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি মনোভাবের দ্বারা। সামান্য শিক্ষিত বা ছাত্রজীবনের কোনো সার্টিফিকেটবিহীন কোনো ব্যক্তি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায়, অথবা যেখানে আইন পাস হয় সেখানকার সদস্য হতে পারে; দ্বিতীয়/তৃতীয় বিভাগপ্রাপ্ত একজন ডিগ্রি পাস বা উচ্চ মাধ্যমিক পাস ছাত্রছাত্রী কেন নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হবে? সুযোগ পেলে সবাই ভালো করতে পারে। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার মতে, অযোগ্য লোককেও দায়িত্ব দিয়ে যোগ্য বানানো যায়। কেউ তো মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা নিয়ে আসে না। তাই নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ, গ্রেডিং/ডিভিশনের সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এটা সত্য যে, এদেশের দুর্নীতির সূত্রপাত হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘুষমুক্ত করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘুষমুক্ত করতে না পারলে কখনও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব হবে না। একজন শিক্ষার্থী সারা জীবন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে এবং প্রতিজ্ঞা করে জীবনেও ঘুষ খাবে না, দুর্নীতি করবে না। কিন্তু তখনই ব্যর্থ হয় যখন দেখে ঘুষ ছাড়া চাকরি হচ্ছে না। আর যখন টাকা দিয়ে চাকরিতে ঢোকে তখন মনোভাব পরিবর্তন হয়ে যায়। যা দিয়ে ঢুকছি তা আগে তুলতে হবে। চাকরিটা তো মূলধন দিয়ে কেনা। তাই মূলধন আগে তুলতে হবে। যত টাকা দিয়ে চাকরিতে ঢুকতে হয় তত টাকা বৈধ আয়/বেতন দ্বারা বিশ বছরেও তোলা যায় না। তখন শুরু হয় ঘুষ-দুর্নীতি। তখন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ তার কাছে মুখ্য নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থে সে মশগুল। সুতরাং আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে কর্মজীবন হবে পবিত্র, দুর্নীতিমুক্ত। সুন্দর হবে আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন।মার্কেটিং পেশাজীবী বায়জিদ, চট্টগ্রাম

No comments

Powered by Blogger.