পাঠ্যবই সংক্রান্ত জটিলতাঃ শিক্ষামন্ত্রীর কথার যেন নড়চড় না হয়

ময়মত কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষাবর্ষের প্রথমদিন বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বর মাসের বাকি ক’দিনের মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
শিক্ষামন্ত্রী আশাবাদী হলেও সরকারের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ২ জানুয়ারি সব ছাত্রছাত্রী নতুন বই নিয়ে ক্লাসে যেতে পারবে কিনা সন্দেহে। বই বাঁধাই ও বিভিন্ন জেলায় বিতরণের কাজ বিলম্বিত হওয়া ছাড়াও নানা কারণে এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও দাখিল পর্যায়ের প্রায় ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর যথাসময়ে বই না পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ইংরেজি ভার্সন বইয়ের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ছাপানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি এখনও। তাছাড়া ইংরেজি ভার্সনের বই বিনামূল্যে দেয়া হবে কিনা, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। সব মিলিয়ে প্রথম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক অনিশ্চয়তার দোলাচলে রয়েছেন।
নতুন শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণের আরও কিছু সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। রেজিস্ট্রেশন না থাকলে বা বোর্ডে পাঠানো জেলা শিক্ষা অফিসের তালিকা থেকে কোনো স্কুল বাদ পড়লে কিংবা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যায় ভুল থাকলে সংশ্লিষ্টরা মুশকিলে পড়বেন। এক্ষেত্রে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে এবং এসব শিক্ষার্থী কীভাবে বই পাবে—সে বিষয়টি এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তাছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে বিক্রিযোগ্য বই ছাপা হলেও মাধ্যমিক স্তরের জন্য তা ছাপানো হবে কিনা সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে ছাপা বই বাঁধানোর কাজ চলছে অনেকটা ঢিমেতেতালা গতিতে। এই পরিস্থিতিতেই শিক্ষামন্ত্রী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব ছাত্রছাত্রীর হাতে বই তুলে দেয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আশাবাদী। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৮০ ভাগ এবং ইবতেদায়ী স্তরের প্রায় শতভাগ পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরের মধ্যেই। তাছাড়া প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বোর্ডের বই ওয়েবসাইটে প্রদান করা হবে। যাতে সচ্ছল পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা বইগুলো ডাউনলোড করে পড়তে পারে। এদিকে মুদ্রণকারীদের আশঙ্কা, শতকরা ৮০ ভাগ বই যথাসময়ের পৌঁছানো সম্ভব হলেও শতভাগ বই পৌঁছাতে পুরো জানুয়ারি মাস লেগে যেতে পারে।
যাই হোক শিক্ষামন্ত্রীর আশাবাদ আর মুদ্রণকারীদের সংশয়ের মধ্যে কোনটি সঠিক তা প্রমাণ হবে অচিরেই। কারণ সময় আছে আর মাত্র ১৭ দিন। নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হবে ২ জানুয়ারি। শিক্ষামন্ত্রীর কথা অনুসারে এর মধ্যে সবাই বই পেয়ে যাবে। আমরা জানি, বিনামূল্যের পাঠ্যবই যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের। এটি একটি জাতীয় কার্যক্রম এবং পুরনো সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে সময়মত কাজ শেষ না করতে পারার মতো কোনো অজুহাত দেখানোর অবকাশ নেই। সয়মমত বাঁধাই, মুদ্রণ, বিতরণ না হওয়ায় এই জরুরি কর্মকাণ্ডে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে তা থেকে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনারই আরেকটি নজির স্থাপন হবে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, কিছু কিছু বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেনি। সারা বছরের কাজ ডিসেম্বর মাসে ঠেলে দিলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। সময়ের এক ফোঁড় পরিণত হয়েছে অসময়ের দশ ফোঁড়ে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরেই যদি শিক্ষা উপকরণ বিশেষত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে এ ধরনের আশঙ্কা পোহাতে হয়, তাহলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা কি করে নির্বিঘ্ন হবে, তা চিন্তার বিষয় বৈকি। আমাদের প্রত্যাশা, শিক্ষামন্ত্রীর কথামত যথাসময়ে সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে যাবে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে অন্যান্য জটিলতার নিরসন হবে।

No comments

Powered by Blogger.