প্রধানমন্ত্রী কি ভারত সফরের প্রাক্কালে ভেবে দেখবেন? by প্রকৌশলী এস এম ফজলে আলী

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর এই প্রথম আগামী জানুয়ারিতে সরকারিভাবে ভারত সফরে যাচ্ছেন। ভারত ও বাংলাদেশ সরকার উভয়ই এই সরকারি সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। বিগত ৩৮ বছরে ভারত-বাংলাদেশের কাছে অনেক কিছুই চেয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলো বিষয় তারা এরই মধ্যে পেয়ে গেছে।
কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশ তেমন কিছুই পায়নি। ভারত প্রথমেই ১৫০ বর্গকিলোমিটারের ছিটমহল বেরুবাড়ী পেয়ে গেছে। বাণিজ্যে তারা বলতে গেলে একচেটিয়া সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ চালু করে তার উপকার একতরফাভাবে ভোগ করছে। দুই দেশের অন্যান্য নদীর পানি চুক্তি ছাড়াই একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তালপট্টি দ্বীপ তারা জবরদখল করে রাখছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার প্রায় ২৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা তাদের বলে দাবি করে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। তার ওপর এশিয়ান হাইওয়ের নামে করিডোর চাচ্ছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছে। মিয়ানমার থেকে গ্যাস নেয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পাইপ লাইন বসাবার অনুমোদন চাচ্ছে। টিপাইমুখ ড্যাম করে, ফারাক্কার কারণে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ যেমন মরুকরণের কবলে পড়ছে, তেমনি উত্তর ও পূর্বাঞ্চলেরও এক-তৃতীয়াংশ মরুকরণের দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছে।
ওদিকে বেরুবাড়ীর বিনিময় আমাদেরকে মাত্র তিন বিঘা জমি দেয়ার কথা দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাওয়ার পথ হিসেবে। কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক চালবাজিতে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা ঠুকে তা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উক্ত ছিটমহলের দশ হাজার বাংলাদেশীর যে অবর্ণনীয় কষ্ট তা দৈনিক পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অহরহ প্রচারিত হলেও ভারত সরকার সে ব্যাপারে নির্বিকার। বাংলাদেশীদের বিগত তিনযুগ ধরে সীমান্তে বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে যাচ্ছে, তা বন্ধের কোনো পদক্ষেপ ভারত সরকার নিচ্ছে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে দুই দেশের মধ্যে যে পাহাড়সমান ব্যবধান তা কমিয়ে আনার কোনো পদক্ষেপ ভারত নিচ্ছে না। ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানির ব্যাপারে নীতিগতভাবে স্বীকার করলেও নানা ট্রেড ব্যারিয়ার সৃষ্টি করে তা বন্ধের পর্যায়ে। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার দরুন বাংলাদেশ থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সাত বোনের ব্যবসায়ীরা সস্তার মালামাল তাদের দেশে আমদানি করতে পারছে না। ভূমিবেষ্টিত হিমালয় দুহিতা নেপাল ও ভুটান আমাদের পণ্য রফতানির জন্য বিগত তিন যুগ যাবত্ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু ভারতের বাধার জন্য মাত্র ২৩ কিলোমিটার করিডোর নেপাল-বাংলাদেশ পাচ্ছে না। এত বড় দেশ ও এত বিরাট সমরশক্তির অধিকারী ভারত নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তা দিচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে করিডোর চাচ্ছে ভারত, তাতে বাংলাদেশ পাঁচটি টুকরায় বিভক্ত হবে এবং সে করিডোরের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৫০০ কিলোমিটারের বেশি।
এটা স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারতের কংগ্রেস সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক বহু আগে থেকেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় ইন্দিরার কংগ্রেস সরকার ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করেছে। ভারত সরকার বাংলাদেশকে সহায়তা করছে তার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই। পাকিস্তানকে দুর্বল করার একটি নতুন বন্ধু রাষ্ট্র পাওয়া। এর মূল উদ্দেশ্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে তার পুরো বাজারে পরিণত করতে পেরেছে। ভারত নেপাল-ভুটান-শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপসহ বাংলাদেশে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ওদিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক অভিযানে তার শক্তি আরও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। কাজেই ভারতের একক শক্তি এ অঞ্চলে এখন অনস্বীকার্য।
এহেন অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর। বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল বেশ ঘোলাটে হয়ে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর জর্জ বুশ আধিপত্য খাটাতে গিয়ে যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাতে সন্ত্রাস যেমন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের অপচয় হয়েছে। ফলে সারা বিশ্বে মহামন্দা শুরু হয়। তা এখনও সামাল দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে চীন তার উত্পাদন ব্যবস্থা দ্রুত বৃদ্ধি করায় আজ এক মহাশক্তিধর দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। তাই বিশ্বশক্তির কেন্দ্রবিন্দু এখন আর এক রাষ্ট্রে নেই। রাশিয়া-চীন যুক্তশক্তি হচ্ছে। ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সামরিক ও আণবিক শক্তির যেসব চুক্তি করছে তাতে দক্ষিণ এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আসতে বাধ্য। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনীতি হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ। চীন বিরাট দেশ এবং তার চাহিদাও প্রচুর। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি জোট সরকারের আমলে পূর্বমুখী করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু খালেদা সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে যে দুষ্ট চক্র ছিল, তাদের কারণে সে নীতি এগুতে পারেনি। বিশেষ করে সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদের কারণেই তা বেগবান হয়নি। যাই হোক, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টায় চীনের সঙ্গে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের চাহিদা মোতাবেক সামরিক ও বেসামরিক মালামাল আমদানি ও রফতানি শুরু হয়। চীন শুধু পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়ায়নি। বাংলাদেশ ছোট অনুন্নত রাষ্ট্র হলেও চীন যথেষ্ট গুরুত্ব দিত। মিয়ানমার হয়ে চীনের কুমিংটাংয়ে সংযোগ সড়ক করারও প্রস্তাব চীন দিয়েছিল। তাতে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বাড়ত এবং আমাদের পণ্য মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং চীনে দ্রুত ও অল্প খরচে পৌঁছত। এশিয়ান হাইওয়ে দ্বারা পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশের তেমন লাভ হবে না। এখান থেকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা তার পশ্চিমের দেশগুলোতে সড়ক পথে মালামাল পাঠানো কোনোভাবেই লাভজনক হবে না। বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো যুদ্ধ করে অন্য দেশ দখল করার নীতি বাদ দিয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের নীতি গ্রহণ করেছে। তাদের সে নীতির আগ্রাসনে আমরাও আছি। আমাদের উচিত, যে পথে সীমিত বাণিজ্য প্রসারিত করা যায় সে পথ বেছে নেয়া। তা করতে হলে আমাদের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে।
ইদানীং চীন কয়েকটি কারণে বাংলাদেশের ওপর নাখোশ। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মেলন কেন্দ্র রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ইমেজ অনেক ঊর্ধ্বে। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের নামের পরিবর্তন করে তার মর্যাদা তেমন বাড়ে না। অথচ তার পূর্ব নামে একটি শক্তিধর দেশের সম্পৃক্ততা বাড়ত। আর যখন সে সম্মেলন কেন্দ্রটি চীনের অর্থায়নেও তাদের প্রকৌশলী দ্বারা নির্মিত তখন সে নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজনটা কী? পদ্মার ওপর যে সেতু হচ্ছে তার নাম বঙ্গবন্ধু সেতু রাখলেই তো তার নামের প্রতি সঠিক সম্মান প্রদর্শন হয়। তার চেয়ে বড় কথা চীন থেকে যে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করা হতো হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছে। চীন থেকে তুলনামূলক স্বল্পমূল্যে তা পাওয়া যেত। অধিকন্তু বর্তমানে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণ ভারতমুখী হয়ে পড়েছে। চীন এটা মোটেই সুনজরে দেখবে না। ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মারাত্মক টানাপড়েনের মধ্যে চলছে। সবচেয়ে তাদের বড় সমস্যা সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে। চীন-ভারত সীমান্ত কাশ্মীর থেকে অরুণাচল পর্যন্ত বিস্তৃত। অরুণাচল প্রদেশটি তিব্বতের অংশ বলে চীন দাবি করছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের উচিত ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। ভারত-চীন উভয়ই আমাদের প্রতিবেশী শক্তিধর রাষ্ট্র। তাই উভয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত সাম্যের ভিত্তিতে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়—এই হওয়া উচিত আমাদের মতো দুর্বল রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু বর্তমান সরকার সব কিছুতেই ভারতমুখী হওয়ায় চীন তা স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রায় নৌযুদ্ধের পর্যায় চলে গিয়েছিল। তখন চীনের হস্তক্ষেপে মিয়ানমার বিরোধপূর্ণ সমুদ্র এলাকা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার একচোখা ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতি শুরু করায় চীন মিয়ানমারের ওপর এখন কোনো প্রভাব খাটাচ্ছে না। সে সুযোগে মিয়ানমার আবার আমাদের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে চলেছে। ভারত-মিয়ানমার যুক্ত হয়ে আমাদের সমুদ্রসীমা দখল করার পাঁয়তারা করছে। মিয়ানমার আমাদের যে সমুদ্র এলাকা তাদের বলে দাবি করছে তার কারিগরি কাজগুলো ভারতের বিশেষজ্ঞরা করে দিয়েছে এবং সে ভিত্তিতে উভয়ই দাবিনামা জাতিসংঘে উত্থাপন করেছে। এভাবে বহু বিষয়েই দেখা যাবে ভারত এখনও আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু হতে পারেনি। তদসত্ত্বেও প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সুপ্রতিবেশী হিসেবে থাকতে চাই। সে ধরনের তত্পরতা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চালানো উচিত।
শেখ হাসিনার এ টার্মের সরকার শুরুর থেকেই ভারতপ্রীতি ও ভারতবন্দনা শুরু করেছে। পানি সম্পদমন্ত্রী টিপাইমুখ বাঁধের কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি দেখছে না। সে বাঁধ হয়ে গেলে এবং আমাদের ক্ষতি হলে তখন দেখা যাবে। এ ধরনের অর্বাচীন কথায় বিশেষজ্ঞদের কথা দূরে থাক, এখন সাধারণ মানুষও শঙ্কিত। যোগাযোগ ও বাণিজ্যমন্ত্রীর কথায় ভারতকে এশিয়ান হাইওয়ের নামে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের অনেক আর্থিক লাভ হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কথা ওতে আমাদের আর্থিক লাভ তো হবেই না, দেশ মারাত্মক নিরাপত্তার হুমকিতে পড়বে। ভারতের ‘সাত বোন’ পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে, তার এলাকা কালে কালে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। এসব বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবার বিষয় আছে। ভারত বর্ণিত বিষয়গুলো বহুদিন থেকে চেয়ে আসছে, কিন্তু দেশের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কোনো সরকারই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই হাসিনার সরকারকে বিষয়গুলো ভালোভাবে ভেবে দেখতে হবে। তড়িঘড়ি করে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না। আমরা আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম অস্তিত্ব বজায় রেখেই ভারতের সঙ্গে যে কোনো বিষয় কথা বলব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটা বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, এক সাংবাদিকের (নামটা মনে আসছে না) প্রতিবেদনে এসেছে, ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে তখনকার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হাকসার বিশেষ মিশন নিয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করে বের হওয়ার সময় তার গম্ভীর মুখ দেখে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, ভারতকে গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা। তিনি নেতিবাচক জবাব দেন, এটা ধারাবাহিক আলোচনার বিষয়। অথচ তার সরকার তাকে পাঠিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে তা আদায় করে নেয়ার জন্য। তিনি চলে যাওয়ার পরও সাংবাদিকরা ড্রইংরুমে বসে আছেন। বঙ্গবন্ধু তার চিরাচরিত পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে সাংবাদিকদের কাছে উপস্থিত হন। সাংবাদিকরা ওই বিষয়টিই জানতে চান, ভারতে গ্যাস রফতানির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা। তিনি বললেন, ‘দেখ আমাদের আছে মাত্র গ্যাস— সেটা অন্যকে দিলে আমাদের থাকবে কি? আমরা নতুন সরকারি কাজ চালাচ্ছি। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। এখন থেকে যা কিছুই করা হবে তা ভেবে-চিন্তে করা হবে।’ তিনি একথা দ্বারা চটজলদি করে বেরুবাড়ী ভারতকে হস্তান্তর ও ফারাক্কা চুক্তির কথাই বুঝিয়েছেন। এখনও সেসব সাংবাদিকের অনেকেই জীবিত আছেন।
শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের আমলে এটাই তার প্রথম ভারত সফর। তাই একে সৌজন্যমূলক সফর হিসেবে বিবেচনা করাই দেশের মঙ্গল হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি এ মুহূর্তে না করাই ভালো। প্রত্যেকটি বিষয় ভেবে-চিন্তে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জাতীয় স্বার্থের অনুকূল সিদ্ধান্ত নেয়াই জাতি আশা করে। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ভারতকেই সেই নীতি অনুসরণ করতে হবে। ‘শুধু নিব, কিছুই দেব না’—তা কোনো বন্ধুর কাজ নয়। এরই মধ্যে ভারতের কোনো কাজই বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেনি। বেরুবাড়ী নিয়েও তিনবিঘা করিডোর দিল্লি এখনও বুঝিয়ে দেয়নি। ফারাক্কা চুক্তি করেও আমাদের হিস্যার পানি দেয়নি। আমাদের তালপট্টি দ্বীপ ও সমুদ্রসীমা তিনযুগ ধরে ঝুলিয়ে রাখছে—কোনো সমাধানে আসছে না। এরকম বহু ফিরিস্তি দেয়া যায়, যাতে ভারতের প্রতি আগ্রহ দেখানোর মতো কোনো বিষয় বাংলাদেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছে না। ভারতেরই উচিত আমাদের মধ্যে আস্থার ভাব জাগিয়ে তোলার। তাই শেখ হাসিনার এই ভারত সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেরূপ কিছু কাজ করতে ভারতকে উত্সাহিত করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.