পার্থ টেস্ট-আড়াই দিনেই শেষ ভারত

পাঁচ মাস আগেই বুঝেছিলেন ইয়ান চ্যাপেল। ভারতীয় দল তখন ইংল্যান্ডে। প্রথম তিন টেস্ট হেরে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান হারানোর পর গত ১৪ আগস্ট চ্যাপেল ক্রিকইনফোতে লিখেছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সিরিজটাও কি ভারত এখনই হেরে গেল?’ বুড়িয়ে যাওয়া ব্যাটিং লাইনআপ, এক জহির খান ছাড়া নখদন্তহীন বোলিং আক্রমণ আর ফিল্ডিংয়ে দুরবস্থা দেখে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক লিখেছিলেন, এই দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পেরে উঠবে না ভারত।


কাল মধ্যাহ্নবিরতির মিনিট দশেক পর বড় সত্যি বলে মনে হলো এই ভবিষ্যদ্বাণী। প্রথম দুই টেস্ট তবু চতুর্থ দিনের বিকেল দেখেছিল। পার্থে ভারত ইনিংস ও ৩৭ রানে হারল আড়াই দিনেরও কম সময়ে। চার বছর পর খোয়াতে হলো বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিও। বিদেশের মাটিতে টানা সাত টেস্ট হেরে সাবেক এক নম্বররা এখন আরেকটি ধবলধোলাইয়ের শঙ্কায়। এই লজ্জা এড়ানোর লড়াইয়ে ভারতকে আবার নামতে হবে অধিনায়ককে ছাড়াই। এক বছরের মধ্যে দুবার স্লো ওভার রেটের কারণে ২৪ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া অ্যাডিলেড টেস্টে খেলতে পারবেন না মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ডেভিড ওয়ার্নার প্রথম দিন শেষেই বলেছিলেন, ‘ভারত ম্যাচ হেরে বসে আছে।’ দ্বিতীয় দিনে সেই হার মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। কাল কৌতূহল ছিল ভারত ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারে কি না। লাঞ্চ পর্যন্ত সেই সম্ভাবনা বজায় ছিল। কিন্তু লাঞ্চের পর ৮ বলে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় ভারত। সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার হিলফেনহসকে খানিকটা বিবর্ণ মনে হয়েছিল প্রথম সেশনে। লাঞ্চের পর সেই হিলফেনহসই নিজের দ্বিতীয় ওভারে ৫ বলে তুলে নিলেন ৩ উইকেট। বিরাট কোহলিকে আউট করে ধ্বংসযজ্ঞের শেষ পিটার সিডলের হাতে। ম্যাচে ভারতের সামান্য যা প্রাপ্তি, তা এই কোহলির ব্যাটিংই। বাইরে বসে আছেন রোহিত শর্মা, এমন চাপের মধ্যে দুই ইনিংসেই সর্বোচ্চ রান আত্মবিশ্বাস জোগাবে তরুণ ব্যাটসম্যানকে।
আগের দিন শেষ বিকেলের প্রতিরোধ কাল সকালেও ধরে রেখেছিলেন কোহলি ও দ্রাবিড়। কিন্তু ‘দ্য ওয়াল’-এ যে সাম্প্রতিক সময়ে ফাটল ধরছে নিয়মতই। ৮৪ রানের জুটি শেষ দ্রাবিড়ের আউটে, রায়ান হ্যারিসের ভেতরে ঢোকা বলে মাটিতে গড়াগড়ি খেল লেগ স্টাম্প। সিরিজের ৬ ইনিংসে পঞ্চম আর গত ১০ ইনিংসে অষ্টমবার বোল্ড। ৫৩ বার বোল্ড হয়ে আগের ইনিংসেই ছুঁয়েছিলেন অ্যালান বোর্ডারকে, কাল রেকর্ডটা শুধুই নিজের করে নিলেন।
হিলফেনহস-সিডল-স্টার্ক-হ্যারিস—অস্ট্রেলিয়ার চার পেসার উইকেট নিয়েছেন ঠিক প্রথম ইনিংসের ক্রমধারায়: ৪-৩-২-১। ম্যাচে ৮ উইকেট হিলফেনহসের, ম্যাচসেরা তবু ডেভিড ওয়ার্নার। সবুজ উইকেটে তাঁর অতিমানবীয় ইনিংসটাই যে গড়ে দিয়েছে ব্যবধান! অধিনায়কের বিশেষ ধন্যবাদ পেলেন। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের কণ্ঠেও ওয়ার্নার-স্তুতি, ‘ব্যাটিং ব্যর্থতাই আমাদের ডুবিয়েছে। তবে এই উইকেটে ব্যাটিংটা মোটেও সহজ নয়, উদ্বোধনী জুটির পর ওরাও তো সুবিধা করতে পারেননি। ওয়ার্নারের ইনিংসটাই আমাদের ছিটকে দিয়েছে ম্যাচ থেকে।’
আর ক্লার্ক বুঝিয়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতের পথচলায় সত্যিকারের এক নেতা পেয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া, ‘সিরিজ জিতে খুশি, আজ রাতটা আমরা অনেক আনন্দ করব। কিন্তু কালই আবার দৃষ্টি দেব অ্যাডিলেডের দিকে। খুব বেশি কিছু এখনো আমরা অর্জন করতে পারিনি। বিশ্বের দুই নম্বর দলকে সিরিজে হারিয়েছি, এ জন্য আমরা অবশ্যই গর্বিত। কিন্তু তৃপ্ত হওয়ার আগে কাজ এখনো অনেক বাকি। আমাদের লক্ষ্য তিন ধরনের ক্রিকেটেই বিশ্বসেরা হওয়া...।’

তিক্ত স্বাদ
৪১তম ইনিংস পরাজয়ে (৪৬১ টেস্টে) ভারত ছুঁল অস্ট্রেলিয়াকে (৭৪০ টেস্টে ৪১)। ‘ওপরে’ আছে ইংল্যান্ড (৯১৫ টেস্টে ৫৪) ও নিউজিল্যান্ড (৩৬৭ টেস্টে ৪৪) ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.