বিদেশি ঋণ-লুটপাটের বিবর্ণ চিত্র মুছে ফেলুন

দুর্নীতি এই সমাজ ও রাষ্ট্রের এক কালব্যাধি। এই ব্যাধি নির্মূলের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নানা রকম উদ্যোগ-আয়োজন হয়েছে বটে, তার পরও নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। গত ২৩ অক্টোবর সহযোগী একটি দৈনিকে এ সম্পর্কিত তথ্যচিত্রসংবলিত যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে, এরপর সংগতই পুনর্বার প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, এমন চলতে থাকলে এ দেশের ভবিষ্যৎ কী?
২২ অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জাতীয় সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে জাতীয় অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত বিদেশি ঋণ লুটপাটের যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন, তা উদ্বেগজনক।
দারিদ্র্যপীড়িত এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নামে যে ঋণ সহায়তা নেওয়া হয় কিংবা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে সহযোগিতা মেলে দাতা সংস্থা বা দেশগুলোর পক্ষ থেকে, তার যথাযথ ব্যবহার নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এত সব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কিংবা প্রতিকার তেমনভাবে মিলছে না, যেমনভাবে মিললে এ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। গত ৩০ বছরে দেশে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ সহায়তা এসেছে এবং এর প্রায় ৭৫ শতাংশ লুট করেছে অর্থনীতি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দুর্নীতিবাজ অপচক্র। এর বিরূপ বহুমুখী প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। একদিকে ক্ষমতাধররা অধিক ক্ষমতাবান হয়েছেন, অন্যদিকে ক্ষমতাহীন দরিদ্রের অক্ষমতা আরো বেড়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে অপধারা থামানো যায়নি। যে দুষ্টচক্র সব সম্ভাবনার গলা টিপে ধরে আছে এবং অর্থনৈতিক মুক্তির প্রায় সব পথ রুদ্ধ রেখেছে, তাদের চিহ্নিত করে কার্যকর প্রতিকার কোনো দুরূহ ব্যাপার না হলেও রাজনৈতিক-সামাজিক অঙ্গীকারের মধ্যে ফাঁক থাকায় তাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অন্ধকার দূর হওয়া তো দূরের কথা, নতুন করে অপচ্ছায়া আরো বিস্তৃত হচ্ছে। দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থে এর অবসান অত্যন্ত জরুরি।
দুঃখজনক হলেও সত্য, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে যথোপযুক্ত দিকনির্দেশনা না থাকার বিষয়টি প্রশ্নবোধক। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ দারিদ্র্য হ্রাসে প্রকৃত নিয়ামকগুলো কিভাবে কাজ করবে, এর কাঠামো ও দিকনির্দেশনা অত্যন্ত জরুরি। এ দেশে দারিদ্র্যের প্রকাশ বহুমুখী এবং এসব সামনে রেখেই উন্নয়ন কিংবা মুক্তির লক্ষ্যে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নেওয়া হয়। কিন্তু ঋণ সহায়তা নিয়ে যদি এ রকম তুঘলকি কাণ্ড চলে, তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নই শুধু দুরূহ নয়, এর ধাক্কা লাগে রাষ্ট্রকাঠামোতেও। দুর্নীতি নির্মূল এ সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আমরা আশা করব, সরকার তার অঙ্গীকার পূরণে এই মহাব্যাধি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সব কিছুর ঊধর্ে্ব উঠে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে এবং ঋণসহ সব মাধ্যমে পাওয়া সাহায্য-সহযোগিতার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবে।

No comments

Powered by Blogger.