অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত আয় পুঁজিবাজারে নয় :এনবিআর by আবু কাওসার

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে কালো টাকার উৎস সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোনো প্রশ্ন করবে না। তবে অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করলে তার দায়দায়িত্ব এনবিআর নেবে না। গতকাল রোববার এনবিআর এ সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করেছে।
বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে গঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ বা এপিজির বিরোধিতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।


এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বহাল আছে। এক্ষেত্রে এনবিআর কোনো প্রশ্ন করবে না। তবে অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা প্রশ্ন করলে তার দায়দায়িত্ব এনবিআর নেবে না।
গতকাল এনবিআরের জারিকৃত আদেশে বলা হয়েছে, ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে এনবিআর তার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইবে না। তবে 'অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে অর্জিত আয়' পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে না। আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১১
সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে এবং একই অভিযোগে মামালা করা হয়েছে তারাও পুঁজিবাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পাবে না।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ আয়ের উৎস বলতে সাধারণত অর্থ পাচার, ঘুষ, চোরাচালান, খুন, ডাকাতি কিংবা অন্য কোনো পন্থায় দুর্নীতি করে অর্জিত আয়কে বোঝায়। নতুন আদেশের ফলে এসব অপকর্মের মাধ্যমে যারা আয় করবে তারা পুঁজিবাজারে টাকা সাদা করার সুযোগ পাবে না। সন্দেহভাজনদের আয় সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসা করতে পারবে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আয়কর বিশেষজ্ঞ এনবিআরের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আমিনুর রহমান সমকালকে বলেন, কালো টাকার উৎস হচ্ছে অবৈধভাবে অর্জিত আয়, যেমন_ ঘুষ, কালোবাজারি, ডাকাতি, খুন, দুর্নীতি ইত্যাদির বিনিময়ে আয় করা অর্থ। সরকার এখন যে শর্ত দিয়েছে তাতে অবৈধভাবে যারা আয় করবে বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না তারা। কেন পারবে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অপরাধের জন্য প্রচলিত আইনে শাস্তির বিধান আছে। কাজেই দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
কালো টাকা বিনিয়োগে শর্তহীন সুযোগ দেওয়ার বিধানে আন্তর্জাতিক সংস্থা এপিজি বিরোধিতা করে সরকারকে বলেছে, এ সুযোগ উন্মুক্ত থাকলে বেড়ে যাবে অর্থ পাচার, উৎসাহিত হবে দুর্নীতি। এতে জঙ্গি অর্থায়ন উৎসাহিত হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া এ সুযোগ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন আইনের পরিপন্থী। কাজেই ঢালাওভাবে এ সুযোগ দেওয়া সমীচীন হবে না। এটি বাতিল না করলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকিও দিয়েছে এপিজি। তাদের আপত্তির মুখে বিদ্যমান বিধান সংশোধন করে তা কার্যকর করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
জানা গেছে, ২০১১ সালের নভেম্বরের শেষে শেয়ারবাজারে শর্তহীন কালো টাকা খাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক আদেশ জারি করে তা কার্যকর করে। এর কারণ হিসেবে তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিনাপ্রশ্নে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার ফলে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হবেন এবং বাজার চাঙ্গা হবে। দেড় মাসের মাথায় নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো।

No comments

Powered by Blogger.