সাতক্ষীরার ২৭ প্রবাহ-নদী আর কত কাঁদবে?

সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর নদী যতটা না নিজের জন্য, তার চেয়ে বেশি কাঁদত সেই অববাহিকার মানুষের বেদনায়। এ দেশের নদী এখন তার বদলে কীভাবে নিজের বেদনাতেই গুমরে মরে, তার নমুনা মিলবে রোববার সমকালের প্রতিবেদনটিতে। লোকালয় পাতায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরার ২৭টি ছোট-বড় নদী মরতে বসেছে।


ওয়ালিউল্লাহর দেখানো জনপদে নৌরুট বন্ধ হয়ে যাওয়া, কোনো এক বাঁকে চিলতে চর পড়া উপন্যাসের উপজীব্য হয়ে উঠেছিল; সাতক্ষীরায় তার চেয়েও করুণ পরিস্থিতি। সমকালের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, সাধারণভাবে চলাফেরার জন্য নদীগুলো এখন আর ব্যবহারের অনুপযোগী নেই। বিলুপ্তপ্রায় মৎস্যসম্পদও। সেচের কাজেও আসছে না আগের মতো। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো দেখা দিয়েছে মৌসুমি বন্যা ও সাংবৎসরিক জলাবদ্ধতা। বস্তুত দুই দশক ধরেই প্রাকৃতিক আশীর্বাদ বিবেচিত প্রবাহগুলো ওই জনপদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এর কারণ অজ্ঞাত নয়। স্বাধীনতার আগে থেকে বৃহত্তর যশোর-খুলনা অঞ্চলে লোনা পানি ও বন্যা ঠেকানোর জন্য নদীতে নদীতে পোল্ডার ও স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে নদীগুলো প্লাবন সমভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হয়ে পড়ে স্রোতহীন। ওইসব স্থাপনা এখন সাতক্ষীরা ও তার আশপাশের জনপদের জন্য গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছরে এ নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখি, সমীক্ষা হয়েছে। নদীগুলোকে পুনরুদ্ধারে সরকারি প্রচেষ্টাও দৃশ্যমান ছিল। আমাদের মনে আছে, যশোরের ভবদহ এলাকায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় নদী খনন কাজ চলেছে। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছু হয়নি, সমকালের আলোচ্য প্রতিবেদন তার একটি উদাহরণ। আসলে একটি 'ভুল' মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর করুণ পরিণতি ডেকে আনা হয়েছে; কসমিক সার্জারিতে তা সারানো যাবে না। ওই নদীগুলোকে বাঁচাতে হলে আরেকটি মহাপরিকল্পনা দরকার। দরকার ওই নদীগুলোর উৎসস্থল
প্রবহমান করে তোলা। অন্যথায় সাতক্ষীরার নদীগুলোর কান্না
থামবে না। ওই কান্না ইতিমধ্যে তীরবর্তী জনপদে জনপদেও ছড়িয়েছে। যত বিলম্ব হবে, কান্নার রোল তত বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.