বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে-কক্সবাজারে ঝুঁকিতে বসবাস

নিরাপদ বাসস্থান মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হলেও দেশের অধিকাংশ নাগরিক যে তা থেকে বঞ্চিত, কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি স্থাপনই তার প্রমাণ। কী গ্রামে, কী শহরে উন্মূল ও উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং তারা অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।


আবার তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর লোক রমরমা ব্যবসাও করছে।
শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বৈদ্যঘোনা পাহাড়ের চূড়া ও ঢালে কয়েক হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাহাড়ে বসবাস যে নিরাপদ নয়, সেই খবরটি সেখানে বসতি স্থাপনকারীদেরও জানা। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি জোতদার-মহাজনদের দৌরাত্ম্যে যারা ঘরবাড়ি, শস্যজমি হারিয়েছে, তারা যাবে কোথায়? গ্রামের নিঃস্ব ও রিক্ত মানুষ শহরে পাড়ি জমায়।
কক্সবাজার শহরে বন বিভাগের অধীন পাঁচ-ছয়টি পাহাড়ে ৯১৫ একর বনভূমি রয়েছে, যার মধ্যে ৭৫০ একরই বেদখল হয়ে গেছে। এই দখলকে কেন্দ্র করে মধ্যস্বত্বভোগীদেরও চলে রমরমা ব্যবসা। ফাও কামিয়ে নেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। কেবল কক্সবাজার নয়, চট্টগ্রামের পাহাড় ঘিরে এ ধরনের বহু অবৈধ বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। প্রতিবছর পাহাড় ধসে মানুষ হতাহতের ঘটনাও কম নয়।
প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? প্রথমত, সরকারি জমি-পাহাড় দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তা থেকে দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে হলে পাহাড় ও বনভূমি রক্ষার বিকল্প নেই। প্রয়োজনে সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে উচ্ছেদ অভিযান শুধু নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের ওপর চালানো ঠিক হবে না। প্রভাবশালীদের দখলে থাকা খাসজমি-বনভূমি ও পাহাড় উদ্ধারেও নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র বলেছেন, তাঁদের পক্ষে বিপুলসংখ্যক মানুষের আবাসন গড়ে তোলা কঠিন। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও। সর্বোপরি জাতীয় আবাসন নীতির অধীন দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে নিরাপদ আবাসন পায়, সে ব্যবস্থাই করতে হবে সরকারকে। অন্যথায় পরিবেশ রক্ষা বা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.