জন্মজয়ন্তী-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নজরুল স্মরণ by আশীষ-উর-রহমান

শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল তাঁর কণ্ঠে। সাম্প্রদায়িকতার বিষকে মন্থন করে তুলে এনেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার অমৃতসুধা। আবার তিনিই আবেগে থরথর কোমল সুকুমার হূদয়ানুভবে। তিনি বিদ্রোহী, তিনিই গানের পাখি বুলবুল। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।


গতকাল শুক্রবার ১১৩তম জন্মবার্ষিকীতে অগণিত অনুরাগী শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে ঢেকে দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির অন্তিমশয্যা।
এবার কবির জন্মজয়ন্তীর সঙ্গে তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’র প্রকাশনার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে। বিষয়টি জন্মজয়ন্তীর উৎসবে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ আয়োজনে বিস্তারিত কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের এই যৌথ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতের আইন ও বিচার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়বিষয়ক মন্ত্রী সালমান খুরশিদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। স্মারক বক্তৃতা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। কবির পরিবারের পক্ষে তাঁর নাতনি খিলখিল কাজী শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতিসচিব সুরাইয়া বেগম। অনুষ্ঠানে আবৃত্তিশিল্পী কাজী আবু জাফর সিদ্দিকীকে ‘কাজী সব্যসাচী পুরস্কার’ দেওয়া হয়।
আলোচনা পর্বের পর ছিল কবির রচনা নিয়ে দুই দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘মোরা ঝন্ঝার মত উদ্দাম’ সমবেত কণ্ঠের এই গানটি দিয়ে নজরুল ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা এ পর্বের শুরুতেই কবির তারুণ্যদীপ্ত কণ্ঠের প্রতিধ্বনিই যেন শ্রোতাদের অন্তরে অনুরণিত করে তোলেন। এরপর আবৃত্তি। যে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের কথা পরম দরদের সঙ্গে আজীবন উচ্চ স্বরে বলে গেছেন কবি, তাই প্রতিধ্বনিত হয়েছিল ভারতের প্রবীণ আবৃত্তিশিল্পী প্রদীপ ঘোষের দরাজ গলার আবৃত্তি, ‘এই জগতের ধূলিমাখা যত অসহায় সন্তান/ মাগে প্রতিকার উত্তর দাও আদিপিতা ভগবান’। পর্বটি ছিল সংক্ষিপ্ত। তবে তাতে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো কবির দ্রোহ ও প্রেমের প্রকৃতি উঠে এসেছিল বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায়। গানগুলো ছিল প্রেমের। খায়রুল আনাম শাকিল গেয়ে শোনালেন, ‘অতীত দিনের স্মৃতি কেউ ভোলে না ভোলে’। কলকাতার শিল্পী সুস্মিতা গোস্বামী পরিবেশন করেন ‘সেই পুরাতন চাঁদ আমার চোখে আজ নতুন লাগে/ আবার ভালোবাসার সাধ জাগে’। শেষে বিদ্রোহী কবিতা। তবে অন্য আঙ্গিকে। কবিতার মেজাজের সঙ্গে মেলানো যন্ত্রানুষঙ্গ, নৃত্যে-ছন্দে তার নান্দনিক রূপায়ণ। কবিরুল ইসলামের নেতৃত্বে নৃত্যালোকের শিল্পীরা পরিবেশন করেন নৃত্যটি।
এর আগে দিনের শুরুতেই কবির সমাধিতে কবির পরিবারের সদস্যরা পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষে এবং ব্যক্তিগতভাবে কবির অনুরাগীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীতে ছিল বাংলাদেশ-ভারতের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া সারা দেশেই আনন্দ ও উদ্দীপনাময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে তাঁর জন্মদিনের উৎসব।

No comments

Powered by Blogger.