অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক-আমার দেশের প্রকাশনা বাতিল

আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অপরিণামদর্শী ও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ একটি বড় ধরনের হুমকি। সরকার যে প্রতিপক্ষের গণমাধ্যমের প্রতি সহিষ্ণু নয়, সেটা প্রমাণের ক্ষেত্রে এই ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।


প্রায় একই ধরনের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ আমরা অতীতে বিভিন্ন সময়ে দেখেছি। জোট সরকারের আমলে আইনের সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচকে বড় করে দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার ঘটনা ঘটেছে। যে সরকারের আমলেই হোক, এ ধরনের অবস্থান কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, তা আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই।
আমার দেশ পত্রিকার মালিকানা, পুঁজি, মালিকানা বদল, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার নীতিমালা কতটা স্বচ্ছ কিংবা নীতিসম্মত ছিল, সে বিষয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিতর্ক। আমরা যে কারণে উদ্বিগ্ন তা হলো, ভিন্নমতকে জব্দ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহারের বিষয়টি। আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক, যিনি তাঁর পত্রিকার মালিকানা হস্তান্তর করেছেন, তাঁকে একটি গোয়েন্দা সংস্থায় ডেকে নেওয়া হয় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছে। এবং অভিযোগ উঠেছে, দিনভর নাটক শেষে শেষ বিকেলে তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা’ মামলা দায়ের করেন বা তাঁকে দিয়ে তা করানো হয়। ঠিক সেই রাতেই পুলিশ দিয়ে আমার দেশ কার্যালয় ও প্রেস ঘেরাও এবং আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, এমন কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে কাঙ্ক্ষিত নয়।
গণমাধ্যমের মালিকানা হস্তান্তর ও প্রকাশক পরিবর্তন কোনো অভিনব বিষয় নয়। আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক পরিবর্তনের আবেদনের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিবেচনাধীন ছিল বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে আইনানুযায়ী সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন আগেই সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষই সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পত্রিকাটির সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেছেন যে পত্রিকাটি বন্ধ করার পাঁয়তারা আগে থেকেই চলছিল। পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক নির্ধারণী সিদ্ধান্ত যারা এত দিন ঝুলিয়ে রেখেছিল, তারা হঠাৎ জেগে ওঠায় এ ধরনের অভিযোগ বাতিল করে দেওয়া যাচ্ছে না। পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল ও প্রেস তালাবদ্ধ করা হলো মধ্যরাতে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। আমরা মনে করি, পত্রিকাটি বন্ধ করার এই সিদ্ধান্ত বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরমতসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গুরুতর ভুল বার্তা পাঠাবে।
আমরা অবিলম্বে আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.