খোলা চোখে-বামপন্থীরা কোথায় গেল by হাসান ফেরদৌস

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একসময় বামপন্থীদের ভালো কদর ছিল। লোকবল তেমন কখনোই ছিল না, জনসমর্থনও নাম-কা-ওয়াস্তে। কিন্তু তার পরও দু-চারজন বাম নেতা থাকতেন, যাঁদের কথায় রাজনীতির হাওয়া বদল হতো, জনমতের ধারা যেত বদলে। যেমন মওলানা ভাসানী ও মণি সিং।


বাম নেতাদের আমরা সব সময়ই নীতিমান, আদর্শবান ভেবে এসেছি। এমনকি মধ্যপন্থী দলগুলো, যাদের এ দেশে মধ্য-বাম (বা সেন্টার-লেফট) দলে বলে গণ্য করা হয়, তাতেও বাম মনা লোকের কমতি ছিল না। আওয়ামী লীগের মতো দলে ‘মাথা’ হিসেবে গণ্য হতেন বামপন্থী রাজনীতিকেরা। যেমন তাজউদ্দীন আহমদ। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশও বাম ঘরানার ছিলেন। স্কুল-কলেজের ভালো ছাত্ররা প্রায় সবাই কোনো না কোনো বামপন্থী রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। তাঁরাই পরে নানা পেশায় ছড়িয়ে পড়তেন, ফলে সমাজের নানা স্তরে বাম ভাবনা-চিন্তার পক্ষে একটা অনুকূল মেজাজ বজায় থাকত। বিশেষ করে দেশের সংস্কৃতি কার্যত বামপন্থীদের হাতেই ছিল। সংস্কৃতি সংসদ বা ছায়ানট, সংস্কৃতির কোনটা ঠিক-বেঠিক, তা নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল তাঁদেরই। এসব সংগঠন বা আন্দোলনের পেছনে যাঁরা কলকাঠি ঘোরাতেন, তাঁরা সবাই ছিলেন খোলামেলাভাবে বামপন্থী।
এখন, ৪০ বছর হতে না হতেই, দেশের রাজনীতিতে বামপন্থীরা অপাঙেক্তয় হয়ে পড়েছেন। একসময়ের ডাকসাইটে বামপন্থী শ্রমিকনেতা এখন হয়েছেন মেদবহুল পরিবহন ব্যবসায়ী অথবা মধ্যস্বত্বভোগী দালাল। গায়ের জামা বদলিয়ে সরাসরি ডান বা মধ্য-বাম দলেও ঢুকেছেন কেউ কেউ। শুধু ঢুকেই পড়েননি, সেসব দলের মধ্যমণি হিসেবেও স্থান করে নিয়েছেন। বিদেশে সটকে পড়েছেন, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। মাটি কামড়ে পড়ে আছেন এমন বামপন্থী রাজনীতিক, লেখক বা বুদ্ধিজীবী যে নেই তা নয়। তাঁদের কেউ কেউ এখনো মাঝেমধ্যে পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখেন, টক শোতে কথা চালাচালি করেন। বলাই বাহুল্য, দেশে এখন শুদ্ধ বামপন্থী কোনো দৈনিক আর নেই। ফলে এসব বামপন্থী যেসব পত্রপত্রিকায় লেখেন, সেগুলির মালিকরা সবাই, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া, দেশের প্রধান পুঁজিপতি, কেউ বা বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
সংস্কৃতিতে অবশ্য এখনো বামপন্থীরা টিকে আছেন, তবে তাঁদের নিজস্ব কোনো ফোরাম বা প্লাটফর্ম নেই। হয় মধ্য-বাম বা মধ্য-ডান দলের সঙ্গেই তাঁরা নামে-বেনামে যুক্ত। কেউ কেউ এনজিও নামক পরগাছানির্ভর। খয়রাতি পয়সায় চলে এনজিও, তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আর যা-ই হোক বামমুখী হওয়া অসম্ভব। সংস্কৃতিসেবীদের প্রধান আশ্রয় ইলেকট্রনিক মিডিয়া। পত্রপত্রিকা তো বটেই, রেডিও-টিভিও আজ বেসরকারি মালিকানাধীন। বলাই বাহুল্য, এই মিডিয়ার মালিক মাত্রই হয় ভূমিদস্য, নয় তো পুঁজির কাঙাল। বাম ভাইদের কেউ কেউ এখনো রেডিও-টিভিতে বাম ভাবনা-চিন্তার কথা শোনান বটে, কিন্তু প্রতিটি টক শোর পর কড়ায় গণ্ডায় নিজেদের পাওনাকড়ি গুনে নিতে কেউই ভোলেন না।
হলো কী সব বামদের?
শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা দুনিয়া জুড়েই বামদের এখন সংকট চলছে। পঞ্চাশ থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বাম আন্দোলন হয় মস্কোমুখী হালকা-বাম বা চীনপন্থী উগ্র-বাম, এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। মস্কো, মানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খান খান হয়েছে, তারও দুই দশক হতে চলল। আর চীন তো মার্ক্স ও মাওকে বাদ দিয়ে ‘পুঁজিবাদ জিন্দাবাদ’ বলে নিজেরাই ধনতন্ত্রের লেজ ধরে ঝুলে পড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তনের মানে শুধু এই নয় যে বাম আন্দোলন তার দুই প্রধান ‘পেট্রন’কে (অর্থাৎ দাদা) হারাল। এর ফলে সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ নামক ধারণাও ভীষণ রকম মার খেল। সোভিয়েতের পতন ও চীনের ডিগবাজির পর বামেদের সামনে ঝোলানো মুলো দেখার মতো আর কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য স্বপ্নই অবশিষ্ট রইল না। গত ২০ বছরে ইউরোপে তো বটেই, এশিয়া ও আফ্রিকাতেও বাম আন্দোলন তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
২০ শতকের শেষার্ধ্বে পৃথিবীর রাজনৈতিক মানচিত্রে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়, যার কেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বায়ন। এই বিশ্বায়নের ফলে পুঁজি ও পণ্যের জন্য সীমানা বলে আর কিছু থাকল না। শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণীর ভূমিকা গৌণ হয়ে এল, শুধু মাথা খাটিয়ে কাজ করে এমন এক নতুন শ্রেণীর আবির্ভাব হলো, মধ্যবিত্ত শ্রেণী দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান আগের চেয়েও পোক্ত করে নিল। এসবের ফলে গুণগতভাবে নতুন যে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের জন্ম হলো, তার তোড়ে ভেসে গেল সমস্ত মার্ক্সবাদী শিক্ষা-দীক্ষা। অবস্থা বদলালে রাজনীতি ও মতাদর্শও বদলায়, কিন্তু বামপন্থীরা নিজেদের যুগোপযোগী করে বদলে নিতে ব্যর্থ হলেন। কোথাও নতুন কোনো মার্ক্স এলেন না, গলা শুনলাম না কোনো লেনিন বা ত্রৎস্কির।
কিন্তু তাই বলে বাম ভাবনা-চিন্তার সবই যে অপাঙেক্তয় হয়ে গেল, তা মোটেই নয়। ইউরোপে, এমনকি আমেরিকাতেও এক নতুন ধরনের বাম-ভাবনার সূত্রপাত হলো। এসব দেশে নতুন যে নেতৃত্বের আবির্ভাব হয়, যেমন ইংল্যান্ডে টনি ব্লেয়ার, আমেরিকায় বিল ক্লিনটন—তাঁরা কোনো রাখঢাক ছাড়াই বাজারব্যবস্থাকে পুরোপুরি গ্রহণ করলেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বোঝালেন যে দেশের বৃহদাংশের কল্যাণ অগ্রাহ্য করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। পুঁজির ভূমিকাকে বিন্দুমাত্র অগ্রাহ্য না করে, বিশ্বায়নের বৈঠায় ঠেকা দিয়ে তাঁরা একটা মাঝামাঝি পথ বেছে নিলেন, যার মোদ্দা কথা হলো, রাষ্ট্রের ভেতরে যে নাগরিক অসাম্য কাজ করে, তা দূর করতে পুঁজিকেও কাজে লাগানো সম্ভব যদি সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়। সমাজতন্ত্রের মূল লক্ষ্যই হলো দেশের ভেতর বৈষম্য হ্রাস করা, সকল নাগরিকগোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা। শুধু পুঁজির হাতে ছেড়ে দিলে এই বৈষম্য দূর হবে না। সরকার যদি অল্পবিস্তর তৎপর হয় বা ‘অ্যাকটিভিস্ট’ ভূমিকা গ্রহণ করে, তাহলে এ লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব নয়। পুরোনো বাম মরে গিয়ে নতুন যে বামের জন্ম হলো তার পোস্টারবয় হয়ে উঠলেন এ দুই মধ্যপন্থী রাজনীতিক।
কিন্তু পুঁজির আধিপত্য মেনে নিয়ে যেকোনো সংস্কার চেষ্টার সাফল্য-সম্ভাবনা যে সীমিত হতে বাধ্য, তার প্রমাণ হাতে নাতে মিলল নতুন সহস্রাব্দে এসে। বাজারব্যবস্থার ওপর সব রকম নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার জোর চেষ্টা শুরু হয় সত্তর ও আশির দশকে, প্রধানত রোনালড রিগ্যানের আমেরিকায়। পরবর্তী দুই দশকে ইউরোপ ও আমেরিকায় এবং তাদের দেখাদেখি তৃতীয় বিশ্বের কোনো কোনো দেশে পুঁজিবাজার হয়ে উঠল একদম বল্গাহীন। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। পুঁজির পাগলাঘোড়া একসময় মুখ থুবড়ে পড়ল। স্টক মার্কেটে ধস নামল, ডজন ডজন ব্যাংকে লাল বাতি জ্বলল, বেকারত্ব হয়ে উঠল আকাশচুম্বী। গভীর গাড্ডায় পড়ে একের পর এক দেশ প্রায় দেউলিয়া হওয়ার জোগাড় হলো। যাঁরা বাজার ও পুঁজিকে ঈশ্বরবৎ বলে বিবেচনা করতেন, এবার তাঁরা প্রমাদ গুনলেন। দক্ষিণপন্থীরা বরাবর বলে এসেছেন, বাজার ও পুঁজির ওপর সরকারের কোনো নাক গলানো তাঁরা সহ্য করবেন না। কিন্তু তাঁদের বন্ধুদের লেজ তখন ইঁদুরধরা কলে আটকা পড়েছে। একমাত্র সরকারই পারে তাঁদের লেজটি রক্ষা করতে, এই যুক্তিতে রাষ্ট্রীয় খাত থেকে কোটি কোটি টাকা ঢালা হলো বেসরকারি খাতকে বাঁচাতে। পুঁজিবাদী আমেরিকার দেখানো এই পথে এগিয়ে এল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
পুঁজির এই সংকটের মুখে বাম রাজনৈতিক ধারণা ফের আলোচনার কেন্দ্রে ফিরে আসে। অর্থনৈতিক সংকটের মুখে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের প্রান্তবর্তী শ্রেণীসমূহ। পুঁজি ও বাজারব্যবস্থার সংকটের মুখে খোদ সরকার টাঁকশালের দরজা খুলে দেয় বড় বড় ব্যাংক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যারা মন্দাবস্থার কারণে চাকরি হারাল, অথবা বাজারব্যবস্থার শিকার হয়ে বসতবাড়ি খুইয়ে বসল, তাদের কথা কে ভাববে? ঠিক এ রকম এক সংকটের সময় আমেরিকার রাজনীতিতে বারাক ওবামার আবির্ভাব। তিনি কমিউনিস্টও নন, প্রথাগত অর্থে বামপন্থীও নন। কিন্তু দেশের দুর্বল শ্রেণীগোষ্ঠীকে বাঁচাতে এবং পুঁজির অন্যায্য আগ্রাসন ঠেকাতে হলে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে, এ কথা সম্প্রতিক সময়ে তাঁর মতো স্পষ্ট ও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে আর কেউ বলেছেন বলে মনে হয় না।
ওবামার রাজনৈতিক এজেন্ডার অনেক কিছুই সোজাসাপ্টা বামঘেঁষা। কিন্তু তাঁর এজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে হলে দেশের ভেতর যে রাজনৈতিক সমর্থন দরকার, ওবামার তা আছে কি না, তা বিতর্কসাপেক্ষ। নির্বাচনের আগে পরিবর্তনের সপক্ষে তৃণমূলভিত্তিক একটি আন্দোলন ওবামা গড়ে তোলেন এ কথা ঠিক, কিন্তু গত দেড় বছরে সে আন্দোলন পরিণত হয়েছে নিজের কঙ্কালে। দেশের ভেতরে প্রগতিশীল ও গণমুখী অর্থাৎ বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন ও আন্দোলন যে নেই তা নয়, কিন্তু তারা তাৎপর্যপূর্ণভাবে সংগঠিত নয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোও নানাভাবে বিভক্ত, নানা রকম কায়েমি স্বার্থবাদের পক্ষেই তারা কাজ করে থাকে। অথচ অন্যদিকে, ডান ও চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলো ওবামার উত্থানকে তাদের কায়েমি স্বার্থের ওপর বড় রকমের আঘাত—এই যুক্তিতে হাত মিলিয়েছে। ফলে শক্তিশালী প্রগতিশীল এজেন্ডা নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা ওবামার নেই, এ কথা এখন প্রমাণিত সত্য। যেটুকু করেছেন, যেমন স্বাস্থ্যবিমা আইন ও প্রস্তাবিত অর্থবাজার সংস্কার আইন, তা এতই দুর্বল যে এই সংস্কারের ফলে সত্যি সত্যি কিছু বদলাবে, এ কথা বিশ্বাস করে এমন লোক খুব কমই আছে।
অবস্থাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো যদি ওবামার পক্ষে এখন একটি সবল ও জনপ্রিয় বাম দল সক্রিয় থাকত। সক্রিয় বাম মানে শুধু বাম রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বামমুখী তথ্যমাধ্যম, বামমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সামাজিক আন্দোলন। বামের ব্যাপারে এই আস্থার কারণ দল অথবা আন্দোলন হিসেবে তারা বরাবর কায়েমি স্বার্থবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পুঁজি বা বাজারব্যবস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলে তাকে তো আর আমরা বাম বলব না। অনেকে মানেন, সফল বাম আন্দোলনের জন্য মাটি এখন প্রস্তুত, অথচ এ সংকট থেকে সবচেয়ে বেশি ফায়দা আদায় করে নিচ্ছে কিন্তু ডানপন্থীরা। ইউরোপে একের পর এক গণকল্যাণমুখী সরকারের সমর্থন ডান ও মধ্যপন্থী দলগুলো পরাস্ত হচ্ছে। আমেরিকাতেও ডান উত্থানের স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যে টি-পার্টি আন্দোলন এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তারা স্পষ্টতই বর্ণবাদী। শ্বেত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ও অভিবাসনবিরোধী এই আন্দোলন খোলামেলাভাবে ফ্যাসিবাদী ভাবনা-চিন্তারও সমর্থক। পূর্ব ইউরোপের কোনো কোনো দেশেও নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থানের চিহ্ন রয়েছে।
আমেরিকা বা ইউরোপের কথা লিখছি বটে, কিন্তু মাথায় আমার বাংলাদেশের উদাহরণটিও ঘুরছে। বড় ধরনের গণতান্ত্রিক বিজয়ের মাধ্যমে একটি মধ্যপন্থী সরকার সেখানে ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু প্রকৃত গণকল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য যে মতাদর্শ-সমর্থিত রাজনৈতিক কর্মসূচি চাই, এ সরকার একা তা অর্জনে সক্ষম কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সরকারের বিশেষত ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের সদিচ্ছায় অনাস্থা প্রকাশ করছি না। তেমন ইচ্ছা, এমনকি চেষ্টাও হয়তো তাদের আছে। কিন্তু প্রকৃত গণকল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চাই তার সমর্থনে সক্রিয় রাজনৈতিক দল। আমাদের সেই দল নেই। সরকার ও রাষ্ট্রের ওপর চাপ বজায় রাখার জন্য চাই শক্তিশালী সুশীল সমাজ। আমাদের তেমন সমাজ তো নেই-ই, যারা আছে তারা আগাপাছতলা সরকার ও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্লায়েন্ট-পেট্রন সম্পর্কে আবদ্ধ। আরও চাই বৃহৎ পুঁজিমুখাপেক্ষী নয় এমন গণমুখী সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও তথ্যব্যবস্থা। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবী হয় এই দলের, নয় ওই দলের। দলের ধরাবাঁধা কথার বাইরে স্বাধীনভাবে কথা বলার শক্তি কি তাদের আছে?
অতএব, আগাতে হলে চাই নতুন দল, নতুন বামপন্থী আন্দোলন। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটি বাঁধবেন কে?
নিউইয়র্ক ২৪ মে ২০১০
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.