নিষিদ্ধকরণের ফল হয় বুমেরাং-ফেসবুক বন্ধের খামখেয়াল

নয় লাখ ব্যবহারকারীর সামাজিক ওয়েবসাইট ফেসবুক বন্ধকে ছিঁচকে চোর ঠেকানোর জন্য কারফিউ জারির সঙ্গেই তুলনা করা যায়। ফেসবুকের কোনো এক ব্যবহারকারীর দ্বারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা জাতীয় নেতৃত্বের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের অভিযোগে বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হয়নি।


ফেসবুক বা এ ধরনের কোনো সুযোগ ব্যবহার করে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এ ধরনের কার্যকলাপের নিন্দা জানাই। অন্যদিকে কোনো এক ব্যবহারকারীর দোষে ফেসবুকের নয় লাখ বাংলাদেশি সদস্য শাস্তি পেতে পারেন না। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
গত রোববারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, আপত্তিকর চিত্রের শাখা-লিংকগুলো বন্ধ করতে না পারায় পুরো ওয়েবসাইটটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। এ বক্তব্যের মাধ্যমে কার্যত সংস্থাটির কারিগরি অদক্ষতাই প্রকাশিত হয়েছে। যে সংস্থাটি দেশের ইন্টারনেট-সেবা ও তার নিরাপত্তাসহ সার্বিক দায়দায়িত্বে নিয়োজিত, তারা সামান্য দুটি লিংক বন্ধ করতে পারে না। প্রথমত, আজকের দুনিয়ায় ইন্টারনেটে কোনো কিছু পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা বাস্তবত অসম্ভব। ইন্টারনেটে প্রযুক্তিগত এমন অনেক উপায় আছে, যার মাধ্যমে যে কেউই অনায়াসে নিষিদ্ধঘোষিত সাইটে যেতে পারে এবং তা দেখতে ও দেখাতে পারে। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের নিষিদ্ধকরণের ফল হয় বুমেরাং। নিষিদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে স্বল্প পরিচিত উপাদানও নিষিদ্ধের প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষণের কারণে আরও ছড়িয়ে পড়ে।
আজকের প্রাযুক্তিক বিপ্লবের দুনিয়ায় যেখানে মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত মত প্রকাশের সুযোগ ব্যাপক হারে বেড়েছে, সেখানে নিষিদ্ধ করা কার্যকর পন্থা নয়। ওয়েব-জগতে হরহামেশাই এমন অনেক কিছু হয়, বাস্তবে যা আমলে না নিলে কারও কোনো ক্ষতি হয় না। বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে ফেসবুক বন্ধ করতে বলায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে। এমন কাজকে অর্বাচীনতা বলা হয়।
আশা করি, সরকার দ্রুতই ক্ষতিকর উপাদানগুলো অপসারণের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশে ফেসবুকে প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা দূর করবে। সুযোগের অপব্যবহারকারীদের বিরত রাখার প্রয়াস যেন অজস্র মানুষের ব্যক্তিগত অধিকারের অসম্মানে পর্যবসিত না হয়।

No comments

Powered by Blogger.