পর্যাপ্ত গাড়ি দিন, নাগরিক পীড়ন বন্ধ করুন-পুলিশের গাড়ি রিকুইজিশন

বাংলাদেশে যে আইন করে বেআইনি কাজ চলতে পারে, তার একটি নজির হলো গাড়ি রিকুইজিশন। ১৯৭৬ সালে মহানগর পুলিশ আইনে যখন এ সংক্রান্ত বিধান করা হয়েছিল, তখন হয়তো ভাবাও হয়নি যে এর অপব্যবহার কত ভয়ানক হতে পারে। কিন্তু এই বিধানটি সংবিধানসম্মত নয়।


এটা সত্য যে এখানে জনস্বার্থে গাড়ি রিকুইজিশনের কথা বলা আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আইনটি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করে। সম্প্রতি এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করেছেন। সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন ওই বিধানটি সংবিধান-পরিপন্থী বলে গণ্য হবে না। এটি নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী রুল। এখন আমরা আশা করব, এর যেন দ্রুত শুনানি হয়।
১৯৭৬ সালে আধা বেসামরিক শাসনামলে ওই বিধানটি করা হয়েছিল। এমনকি মূল অধ্যাদেশেও এটি ছিল না। পরে একটি সংশোধনী এনে বিধানটি যুক্ত করা হয়। এ রকম একটি বিধান সিঙ্গাপুরে রয়েছে। তবে সেটির সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে, আমাদের বিধানটি কতটা অসার এবং নাগরিক স্বার্থের পরিপন্থী। সিঙ্গাপুরের আইন হলো, কোনো জরুরি অবস্থায় নগরের কোনো নির্দিষ্ট ‘ঘোষিত এলাকা’ থেকে পুলিশ গাড়ি রিকুইজিশন করতে পারে। শুধু গাড়ি নয়, ভবন, ভূমি—এমনকি হেলিকপ্টারও নিতে পারে। সে জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি তাদের আইনে নির্দিষ্ট রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালের ওই বিধান-প্রণেতারা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এখতিয়ার একান্তভাবেই কর্তাদের খেয়ালের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
ঢাকার ৪১টি থানা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ গাড়ি রিকুইজিশন করে তথাকথিত জনস্বার্থের নামে। কিন্তু বাস্তবে রিকুইজিশন করা গাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার মতো অনাচারের নজিরও আছে। সুতরাং জনস্বার্থের নামে এই অনাচারের যত তাড়াতাড়ি অপনোদন ঘটে, ততই মঙ্গল। পুলিশ বিভাগকে পর্যাপ্ত গাড়ি না দিতে পারা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার দায় নাগরিকেরা বইবে কেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, ‘জনস্বার্থ’ ছাড়া গাড়ি রিকুইজিশন না করতে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশের পরের দিনই প্রায় ৩০০ গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়েছে। এটি একটি রুটিন বিষয়। আমাদের সংবিধানে ‘আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোনো সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ বা দখল’ নিষিদ্ধ করা আছে। নাগরিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতি মাসে শত শত গাড়ি রিকুইজিশন করা কোনো অবস্থায়ই জনস্বার্থে হতে পারে না।
আমরা মনে করি, বিদ্যমান আইনে উপযুক্ত সংশোধনী আনতে হবে। সর্বাগ্রে পুলিশের পরিবহন-পুলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান সরকারি পরিবহন-পুলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেও এই সমস্যার অনেকটা লাঘব করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। গাড়ি রিকুইজিশনের নামে পদ্ধতিগত নাগরিক পীড়ন বন্ধ করুন।

No comments

Powered by Blogger.