পবিত্র কোরআনের আলো-আদর্শিক বিরুদ্ধবাদীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব না করার পরামর্শ

১১৮. ইয়া-আয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ লা-তাত্তাখিযূ বিত্বা-নাতাম্ মিন দূনিকুম লা-ইয়া'লূনাকুম খাবা-লা-; ওয়াদ্দূ মা- আ'নিত্তুম; ক্বাদ বাদাতিল বাগ্দ্বা-উ মিন আফওয়া-হিহিম; ওয়ামা- তুখফী সুদূরুহুম আক্বার; ক্বাদ বাইয়্যান্না- লাকুমুল আ-ইয়া-তি ইন কুনতুন তা'কি্বলূন।


১১৯. হা-আনতুম উলা-য়ি তুহিব্বূনাহুম ওয়ালা- ইউহিব্বূনাকুম ওয়া তু'মিনূনা বিলকিতা-বি কুলি্লহী; ওয়া ইযা- লাক্বূকুম ক্বা-লূ আ-মান্না-; ওয়া ইযা- খালাও আ'দ্বূ আ'লাইকুমুল আনা-মিলা মিনাল গাইযি; ক্বুল মূতূ বিগাইযিকুম; ইন্নাল্লা-হা আ'লীমুম্ বিযা-তিস্ সুদূর। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১৮-১১৯]
অনুবাদ : ১১৮. হে ইমানদাররা, তোমরা কখনো নিজেদের আদর্শের অনুসারী লোকজন ছাড়া অন্য কোনো লোককে নিজেদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কারণ এরা তোমাদের অনিষ্ট করার কোনো পথ অনুসরণেই দ্বিধা করবে না। তারা তো তোমাদের ক্ষতিই কামনা করে। তাদের প্রতিহিংসা তাদের মুখ থেকেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। অবশ্য তাদের অন্তরে লুকানো হিংসা এর চেয়েও মারাত্মক। আমি সব নিদর্শনই স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি, যদি তোমরা বুঝতে পারো তবেই হয়।
১১৯. এরা হচ্ছে সেসব মানুষ, যাদের তোমরা ভালোবাস। কিন্তু তারা তোমাদের ভালোবাসে না। তোমরা তো সব কয়টি ধর্মগ্রন্থের ওপর ইমান এনেছ, (যদিও তারা তোমাদের ধর্মগ্রন্থকে স্বীকারই করে না)। এসব লোক যখন তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, হ্যাঁ, আমরা তোমাদের কিতাব মানি, আবার যখন এরা একান্তে চলে যায়, তখন ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে আঙুল কামড়ায়। (হে নবী!) আপনি এদের বলুন, যাও, নিজেদের ক্রোধের আগুনে পুড়ে মরো। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা সব বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।
ব্যাখ্যা : এই আয়াত দুটিতে ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিরুদ্ধবাদীদের সঙ্গে আদর্শিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে তাদের সঙ্গে ইহজাগতিক কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটা স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে আচার-আচরণের কিরূপ নীতি অনুসরণ করতে হবে এর রূপরেখা নয়। বরং এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের সঙ্গে কিরূপ নীতি গ্রহণ করা উচিত এরই রূপরেখা। ১১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলো, তবে সেই সুযোগে তারা তোমাদের অনিষ্ট করার চেষ্টা করবে। মুসলমানদের প্রতি তাদের মনের প্রতিহিংসার ভাব তাদের মুখ থেকেও কিছু না কিছু প্রকাশ পায়, তবে অন্তরে তাদের প্রতিহিংসা আরো প্রকট।
তাদের অন্তরের এই অসৎভাবের কারণেই আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে তা প্রকাশ করে দিয়ে তাদের সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে নিষেধ করেছেন। এটা সাম্প্রদায়িকতাকে চাঙ্গা করে তোলার জন্য নয়। বরং সাম্প্রদায়িকতার কুফল থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য।
১১৯ নম্বর আয়াতেও পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতায় বলা হয়েছে যে, তোমরা তাদের ভালোবাসো, কিন্তু তারা তো তোমাদের ভালোবাসে না, তোমরা তাদের সবার ধর্মগ্রন্থকে স্বীকৃতি দাও, কিন্তু তারা তো তোমাদের ধর্মগ্রন্থকে স্বীকার করে না। সুতরাং বৈষম্যমূলক মনোভাবের ভেতরে আন্তরিক বন্ধুত্ব হয় না। তোমাদের একতরফা ভালোবাসা প্রকৃত অর্থে কোনো বন্ধুত্ব তৈরি করবে না। ইসলাম ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার পক্ষে, কিন্তু বর্ণিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একতরফা বন্ধুত্ব করার পক্ষে নয়। আয়াতে বলা হয়েছে, এসব লোক যখন তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন বলে হ্যাঁ, আমরা তোমাদের কিতাব মানি। আবার যখন একান্তে চলে যায় তখন তোমাদের বিরুদ্ধে ক্রোধের বশে আঙুল কামড়ায়। সুতরাং স্পষ্টতই বোঝা যায়, এরা মুসলমানদের শত্রু এবং সত্য ও ন্যায়ের প্রতিপক্ষ। এ ধরনের লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি সত্য, ন্যায় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও অনুকূল নয়। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ ধরনের লোকদের অভিশাপ দিতে। এরা ইসলামের অগ্রগতিতে হিংসার আগুনে জ্বলে। আল্লাহ তাঁর রাসুলকে বলেছেন, আপনি বলুন, তোমরা হিংসার আগুনে পুড়তে পুড়তে মরে যাও। মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব আল্লাহ পছন্দ করেন। বংশে বংশে, গোত্রে গোত্রে, সাম্প্রদায় সম্প্রদায়ে, দেশে দেশে বন্ধুত্ব হোক তা আল্লাহ চান। কিন্তু যারা মনের ভেতরে হিংসা পোষণ করে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করাই ভালো। গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.