পথচলা কি নিরাপদ হবে না?-বাসচাপায় বুয়েটছাত্রের মৃত্যু

ঝরে গেল আরও একটি মেধাবী ছাত্রের প্রাণ। বাসের নিচে চাপা পড়ে গত বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক মৃত্যু হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র খন্দকার খানজাহান সম্রাটের। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে স্পষ্ট যে চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলেই সম্রাট গাড়ির চাকার নিচে পিষ্ট হন।


আমরা নিহত ছাত্রের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। এই দুর্ঘটনার যথাযথ বিচার হবে, এই প্রত্যাশা করি।
রাজধানীতে এর আগেও এভাবে ঝরে গেছে বহু তাজা প্রাণ। চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে শেষ হয়ে গেছে অনেকের স্বপ্ন। ঢাকার ট্রাফিক-ব্যবস্থা এমনিতেই নাজুক। তার ওপর ট্রাফিক আইন না মেনে চলার কারণে মাঝেমধ্যে এ রকম দুর্ঘটনার খবর আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। একেকটি মৃত্যুর পরপর দুর্ঘটনা রোধে কিছু পদক্ষেপের কথাও শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ঢাকার রাজপথে জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কি কখনোই মিলবে না?
অদক্ষ চালকদের দিয়ে গাড়ি চালানোতেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। অদক্ষ চালকেরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই একশ্রেণীর কর্মচারীর যোগসাজশে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশের এক-তৃতীয়াংশ চালকই ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করে গাড়ি চালান। অবৈধ চালকদের ধরতে কিছুদিন পরপর অভিযানের কথা শোনা গেলেও কিছুতেই কিছু হয় না। অনেকে ভুয়া লাইসেন্স দেখিয়ে পার পেয়ে যান। অল্প কয়েকজন ধরা পড়লেও দ্রুত ছাড়া পেয়ে যান। তাই অযোগ্য চালকদের লাইসেন্স প্রদানে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া ছুটির দিনগুলোতে দক্ষ চালকদের অনুপস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সহযোগীরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। এ কারণেও ঘটে দুর্ঘটনা। এমনটা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে গাড়ির মালিককেই।
সহপাঠীর অপমৃত্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। তাঁরা বিক্ষুব্ধ হয়ে অন্তত ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন ও চারটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভের সঙ্গে সহমর্মী হয়ে আমরা বলতে চাই, ক্যাম্পাস এলাকায় ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে; সড়কে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমরা মনে করি, ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন লাগানোর মতো নৈরাজ্যের পথে না গিয়েও প্রতিবাদ করা যায় এবং সে পথ অনুসরণ করাই ভালো।
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার যথাযথ বিচার করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া গেলে অন্যরাও এসব বিষয়ে সচেতন হবেন। তাই তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। অবৈধ যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো গেলে অন্তত রাজধানীতে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। দুর্ঘটনা রোধে চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.