বিরোধী দলের জোরালো উপস্থিতি কাম্য-সংসদের বাজেট অধিবেশন

কাল বুধবার জাতীয় সংসদের যে অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে, তা নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এ অধিবেশনেই ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উত্থাপন করা হবে এং তার ওপর সর্বোচ্চসংখ্যক সাংসদ বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া চলতি অধিবেশনে সংবিধান পরিবর্তনসংক্রান্ত একটি বিল পেশ হতে পারে বলেও একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদেরা তাঁদের মত দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সম্প্রতি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ একাধিক সেমিনার ও টিভি সাক্ষাৎকারে বাজেট অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির মহাসমাবেশে বিরোধী দলের নেত্রী সংসদকে অকার্যকর আখ্যায়িত করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সরকারি ও বিরোধী দল মিলেই জাতীয় সংসদ এবং সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদই হতে হবে রাজনীতির কেন্দ্রস্থল। সংসদ কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দল—উভয়ের দায়িত্ব আছে। বাজেট শুধু একটি বছরের আর্থিক হিসাব নয়; সরকারের উন্নয়ননীতি ও পরিকল্পনাও এতে প্রতিফলিত হয়। এসব বিষয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিবদমান রাজনৈতিক বাস্তবতা সত্ত্বেও অতীতে বাজেট আলোচনায় বিরোধী দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের প্রস্তাব গ্রহণের নজিরও আছে। এবারের বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দল এ সুযোগটি হাতছাড়া করবে কেন?
বিরোধী দলের অভিযোগ, সংসদে তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাদের আনা জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ আলোচনা করা হয় না। এর জবাবে স্পিকার আবদুল হামিদ বলেছেন, বিরোধী দলকে অনুপাতের চেয়ে বেশি সময় দেওয়া হয়। বিষয়টি পরখ করে দেখা কঠিন নয়। সংসদে কোন সদস্য কত সময় কথা বলেছেন, তার রেকর্ড নিশ্চয়ই স্পিকারের কাছে আছে। তিনি দেশবাসীকে সেটি জানিয়ে দিতে পারেন। এর পরও যদি বিরোধী দল তাঁর কথায় আশ্বস্ত না হয়, তাহলে অধিবেশন শুরুর আগেই এ ব্যাপারে উভয় পক্ষ সমঝোতায় আসতে পারে। কিন্তু কোনো অজুহাতেই সংসদ বর্জন করা চলবে না।
কোনো বিল পাস বা সরকারি দলের কারও বক্তব্যের প্রতিবাদে সংসদ বর্জনের নজির সব দেশেই আছে। কিন্তু সেটি হয় সাময়িক। আবার তারা সংসদে ফিরে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে বিরোধী দল সংসদে উপস্থিত থাকার চেয়ে গরহাজির থাকতেই বেশি উৎসাহী। সংসদীয় ব্যবস্থার এই অপকৌশলের অবসান হওয়া জরুরি। সরকারেরও এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে বিরোধী দল সংসদ বর্জনের পথ বেছে নেয়। দীর্ঘদিন পর গত অধিবেশনের শেষ দিকে বিরোধী দল সংসদে ফিরে আসায় জনগণ আশ্বস্ত হয়েছিল। বাজেটসহ জাতীয় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারা সভা-সেমিনারে একসঙ্গে বক্তব্য দিতে পারলে সংসদে যেতে আপত্তি কোথায়? বিএনপির সংসদীয় দলের সভায় আগামীকালের বাজেট অধিবেশনে যোগদানের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করে।

No comments

Powered by Blogger.