চট্টগ্রামে মেধাবী ছাত্র হত্যা-এ কেমন নৃশংসতা!

সহপাঠীদের নির্মম নির্যাতনে 'এ' লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রী মজুমদার হিমুর মৃত্যুর ঘটনাটি যে কাউকে স্তব্ধ ও বিপন্ন করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা অপরাধপ্রবণতা, সন্ত্রাস-মাদক ইত্যাদির প্রভাব পড়তে পারে।


কিন্তু তারা সহপাঠীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করে ফেলবে তা যেন একটু অভাবিত। আর এমন অভাবিত ঘটনাই ঘটেছে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিল হিমু। হত্যার নেতৃত্বদানকারী রিয়াদসহ তারই তিন সহপাঠী একা পেয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায় রিয়াদের বাড়ির ছাদে। সেখানে প্রথমে তার ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়। তারপর ডোবারম্যান জাতের হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়। হিমু যখন মারাত্মক আহত তখন বাড়ির ছাদ থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে হিমুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৭ দিন ধরে চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেল না। গত বুধবার মারা যায় হিমু। হিমুর অপরাধ ছিল সে বখাটে তিন সহপাঠীর মাদক-সংশ্লিষ্টতার প্রতিবাদ করেছিল। বস্তুত হিমুর কোনো অপরাধ ছিল না, আর তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে অপরাধ ছিল, তবু এভাবে নির্মম নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলার নৃশংসতা কেউ করতে পারে না। কলেজ শিক্ষার্থীদের নৃশংসতা, নির্মমতা কোন পর্যায়ে পেঁৗছেছে তা হিমুর ঘটনায় জানা গেল। এ ঘটনা বলছে, সমাজ অবক্ষয়ের কোন সীমানায় পেঁৗছে গেছে। প্রশ্ন জাগে, যাদের কোমলমতি বলে আখ্যায়িত হওয়ার কথা তাদেরই নিষ্ঠুর বলে আখ্যায়িত করার প্রেক্ষাপট কীভাবে তৈরি হলো। স্কুলে তাদের কী পাঠদান করা হয়, বাড়িতেই-বা তারা কী শেখে? নিজের বাড়ির ছাদে সহপাঠীকে নির্যাতন করছে একটি ছেলে অথচ তা দেখার ও তাকে নিবৃত্ত করার কেউ নেই এ যেন এক অভাবিত এক পরিস্থিতি। আরও বিস্ময়কর হলো, মূল নির্যাতক ছেলেটির সেই রাতেই নিরাপদে লন্ডনে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা। ঘটনাবলিতে স্পষ্ট যে, এ নির্যাতন পূর্বপরিকল্পিত। এতে নির্যাতকের পরিবারের সদস্যদেরও সায় থাকতে পারে। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের নৃশংসতা রোধ করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেভাবে তৎপর হওয়া দরকার তা এ ক্ষেত্রে ঘটেনি বলেই অভিযোগ মিলেছে। জানা যাচ্ছে, হিমুর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ নিয়ে পুলিশ তেমন কোনো তৎপরতা দেখায়নি। কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেফতারও হয়নি। আমরা আশা করব, সাময়িক এ শিথিলতা কাটিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য তৎপর হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হিমুর পরিবারে যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে সেদিকেও তাদের মনোযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে জরুরি, হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বদানকারী জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদকে ফিরিয়ে আনা। এমন নির্মম ও নৃশংস ব্যক্তিকে কোনো দেশ বা শহর আশ্রয় দিতে পারে না। এ ধরনের অপরাধীর স্থান অবশ্যই কারাগার বা সংশোধনাগার। অতিদ্রুত দূতাবাসের মাধ্যমে এ অপরাধীটিকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের হাতে সোপর্দ করে তার উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, শিশু-কিশোরদের মধ্যে এমন আশঙ্কাজনক প্রবণতা কেন তৈরি হচ্ছে তা খুঁজে দেখাও জরুরি। বিশেষত পরিবারের অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে তার প্রিয় সন্তান মাদক, সন্ত্রাস, নৃশংসতার শিকার না হয়। এসব প্রবণতাকে প্রশ্রয় দিলে সন্তানদের ভবিষ্যতের উজ্জ্বলতা অন্ধকারে পর্যবসিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.