সামগ্রিক চাহিদা বাড়াতে চাই দ্রুত বাস্তবায়ন-নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি

প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় সরকার এবারও নতুন আরেকটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য এডিপির আয়তন ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। কৃষি, পল্লি উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণীত এই এডিপি বাস্তবায়নই হবে আগামী অর্থবছরে সরকারের তথা রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ।


এবং এটি হবে আগামী বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে নতুন এডিপিতে গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। যে ৯১০টি উন্নয়ন প্রকল্প এর অন্তর্ভুক্ত, তার মধ্যে নতুন মাত্র ৯৪টি। বাকিগুলো পুরোনো; এমন প্রকল্পও আছে যেগুলো বছরের পর বছর চলে আসছে।
এডিপি নিয়ে দুটি বিষয় চিন্তার বা বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রথমত, বরাদ্দ দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়; বরং বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করাটাই জরুরি। প্রতিবছরই সরকার যা বরাদ্দ দেয়, অর্থবছরের শেষভাগে এসে তা কমিয়ে সংশোধন করা হয়। যেমন, চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির মোট প্রকৃত বরাদ্দ ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। তার পরও অর্থবছরের ১০ মাসে সংশোধিত বরাদ্দের ৫৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। অর্থ ব্যয় করা বা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনার জন্য দরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস। অর্থ ছাড় করা থেকে কেনাকাটা সম্পন্ন করা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে জটিলতাগুলো দূর করা প্রয়োজন। আবার এটা করতে গিয়ে যেন অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনতে তাই দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা।
দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হলো, এডিপির আয়তন। এডিপির আয়তন নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বিচার করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে এডিপি আসলে খুব বড় নয়। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র চার শতাংশ হলো এডিপি। এর মানে হলো, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ আমাদের অনেক কম। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ না বাড়ানো গেলে দেশে সামগ্রিক চাহিদা বাড়ানো যাবে না। আর দেশজুড়ে সামগ্রিক চাহিদা বাড়ানো না গেলে অর্থনীতিতে মধ্য মেয়াদে গতিশীলতা আসবে না। এ ক্ষেত্রে সামাজিক খাতগুলোয় রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়িয়ে মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করাটা জরুরি। কারণ, এ কাজের মাধ্যমেই চাহিদা তৈরি হবে, যা মেটাতে আবার বাড়াতে হবে উৎপাদন। আর এই উৎপাদনের চাকা সচল রাখার জন্য প্রয়োজন অবকাঠামোগত সমর্থন। এ জন্যও এডিপিতে অবকাঠামো বিশেষত জ্বালানি প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের ক্ষমতার দেড় বছর পার হতে চলেছে। বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে আর দেরি করার কোনোই অবকাশ নেই।

No comments

Powered by Blogger.