ঝুঁকি কমে গেলেও নিরন্তর নজরদারি প্রয়োজন-জেএমবির শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার

জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা, অস্ত্র-সরঞ্জাম ও সহযোগীদের আটক করার ঘটনা নিঃসন্দেহে সাফল্যজনক। জেএমবির নেতা সাইদুর রহমানের গ্রেপ্তারে জেএমবির আরেকটি অধ্যায়ের শেষ হলো বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা যে অভিমত জানিয়েছেন, তাও হয়তো সত্য।


কিন্তু ২০০৭ সালে দলটির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির মধ্যে দিয়েও কিন্তু নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি বিলুপ্তি পায়নি। আবার তারা সংগঠিত হয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গি তৎপরতায় নিয়োজিত একমাত্র সংগঠন কেবল জেএমবি নয়, আরও নানা সংগঠনের ক্রিয়াশীল থাকার সংবাদ গণমাধ্যমে ইতিপূর্বে এসেছে। সুতরাং এখনই আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে হয়।
তবে একই সঙ্গে এ কথাও ঠিক যে জঙ্গিবাদের হুমকি ও উত্থান ঘটার ঝুঁকি কমে গেছে। তা হলেও নানা পন্থায় তারা শক্তি সংহত এবং সমাজের ভেতরে নিজেদের শেকড় প্রোথিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় তাদের অস্ত্র, অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের তৎপরতার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে এবং তাদের আটক হওয়া সদস্যরা যেসব তথ্য জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রকাশ করেছে, তাতে অনুমান করা কঠিন নয় যে তারা এখনো বিলীন হয়নি। সতর্কতার প্রয়োজন এখানেই। অন্যদিকে কেবল দেশের ভেতর থেকেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকেও বিভিন্ন সময় তারা সাহায্য ও সমর্থন লাভ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে এদের কারও কারও তৎপরতার নিশানা দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও প্রসারিত হয়েছে। এসব বিচারে বলা যায়, দেশীয় স্তরে তারা শক্তিহীন হলেও বিদেশি কোনো অপশক্তির মদদপুষ্ট হয়ে আবার তারা ফণা তোলার চেষ্টা করতে পারে। সে কারণেই জঙ্গিদের বিদেশি যোগাযোগ, অর্থের জোগান ইত্যাদি বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। বিশেষত, নানান কৌশলে অর্থের লেনদেনের বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সংঘটিত প্রায় প্রতিটি জঙ্গি-নাশকতার ঘটনাই ঘটেছে নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে। ধারণা করা যায়, গত সোমবার ঢাকার দনিয়ায় আটক বিস্ফোরক ও অস্ত্র আগের ধারাতেই নাশকতার কাজে ব্যবহূত হতো। এসব অস্ত্র, নাশকতা কিংবা তহবিল সংগ্রহের জন্য জাল মুদ্রা ছাপার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক তো নেই-ই, দুনিয়ার কোনো নীতি-নৈতিকতাও এ ধরনের গণবিরোধী কার্যকলাপকে সমর্থন করে না। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষও এখন আগের চেয়ে বেশি সজাগ।
এ রকম অবস্থায় কেবল দমনমূলক কার্যকলাপ নয়, কিছুসংখ্যক মানুষ কেন এ পথে পা বাড়ায়, তার গোড়ার কারণে হাত দিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজের ভেতরেও যাতে উপযুক্ত সচেতনতা ও প্রতিরোধের মানসিকতা বিরাজ করে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা চাই। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্তরের কোনো অংশ থেকে যাতে তারা সহায়তা না পায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.