প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ-খাদ্যনিরাপত্তা

অনেক বেশি খাদ্য উৎপাদন সবার খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে না। সেটা নিশ্চিত করতে হলে জনগণের খাদ্য কেনার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে আছে অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের তাগিদ।


বুধবার রাজধানীতে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন-সহযোগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বান সময়োপযোগী, কারণ সরকারের একার পক্ষে সার্বিক অর্থে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর সব অংশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এখানে আসে সামগ্রিক অর্থে সুশাসনের প্রশ্নটি। জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিই খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে মূল বিষয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়তে পারে ব্যাপক কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে। আর সেটা সম্ভব হয় কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতার মধ্য দিয়ে। এসবের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলে অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি বাড়ে এবং এর মধ্য দিয়েই জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা কিনা তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তাভাবনা এখনো বিশেষ পরিস্থিতিকেন্দ্রিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্যান্য কারণে যখন খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না, অথবা বিশ্ববাজারে খাদ্যমূল্য বেড়ে গেলে যখন অভ্যন্তরীণ খাদ্যবাজারেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, কেবল তখনই সরকারের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয় এবং একধরনের আপৎকালীন সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলে। পরিস্থিতির বিচারে এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই যুক্তিগ্রাহ্য। তবে এও মনে রাখা দরকার, ফসলহানি ছাড়াও দেশের নানা দরিদ্র অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক মানুষ বছরের একটা বড় সময় প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত থাকে। এই নাজুক জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যনিরাপত্তার অভাব মোটের ওপর এক স্থায়ী সমস্যা। এর কারণ, প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ থেকে যেমনটি বেরিয়ে এসেছে, খাদ্য কেনার সামর্থ্যের অভাব। ক্রয়ক্ষমতার এই অভাবের পেছনে আছে কর্মসংস্থানের অভাব। উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ প্রতিবছর আশ্বিন-কার্তিক মাস থেকে আমন ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত মঙ্গা-পরিস্থিতির শিকার হয় মূলত কাজের অভাবে। কর্মহীন মানুষ হয় ক্রয়ক্ষমতাহীন। ফলে তার খাদ্যনিরাপত্তা ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার কর্মহীনতার অবসান না ঘটে।
প্রয়োজনের মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজার খাদ্যসংকট মোকাবিলার কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস হতে পারে না। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর এই পর্যবেক্ষণ থেকে এটা পরিষ্কার যে, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির চেয়ে উত্তম কোনো বিকল্প আর হয় না। তাই বিপুল পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনই হওয়া উচিত আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সেই সঙ্গে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ও সরবরাহের ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করতে হবে। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়, প্রধানমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন, সবার সেই খাদ্য কেনার সামর্থ্য সৃষ্টি করতে হবে। খাদ্যদ্রব্যের বাজারেও সঠিক ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য, যেন খাদ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকে

No comments

Powered by Blogger.