মন্দা, বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না চামড়ার দাম by ফারজানা লাবনী

লতি বছর কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে খুচরা পর্যায়ে কোনো দাম নির্ধারণ করা হবে না। বিশ্ববাজারে চামড়া ব্যবসায়ে মন্দা থাকায় এবার তেমন অগ্রিম ক্রয় আদেশ পাননি ট্যানারি মালিকরা। তাই সম্প্রতি এক বৈঠকে চামড়া ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ট্যানারস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি বর্গফুট চামড়া ২০ থেকে ৩০ সেন্ট কমে বিক্রি হচ্ছে।


বাংলাদেশের চামড়ার গুণগত মান ভালো থাকায় বিশ্ববাজারে চাহিদাও থাকে। অন্যান্য বছর ঈদের অন্তত ছয় মাস আগেই ট্যানারি মালিকদের কাছে অগ্রিম ক্রয় আদেশ আসতে থাকে; কিন্তু চলতি বছর ঈদুল আজহার মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এ পর্যন্ত সামান্য কিছু অর্ডার আসায় চামড়া ব্যবসায়ীরা হতাশ। তবে তিনি জানান, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত চামড়ার দাম বিবেচনায় রাজধানীর মধ্যে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা খুচরাপর্যায়ে প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন। ঢাকার বাইরে চামড়ার দাম হতে পারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মাচেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আফতাব খান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বছর ঈদুল আজহায় কেনা চামড়া এখনো স্টকে রয়েছে। এর সঙ্গে চলতি বছর আরো চামড়া গুদামজাত করলে সব চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারস্ অ্যান্ড টেকনোলজিস্টস্ সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, কোরবানির চামড়া চার হাত ঘুরে ট্যানারি মালিকদের কাছে পেঁৗছে। ছোট ব্যবসায়ীরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে চামড়া কিনে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা এসব চামড়া কিনে মজুদ করেন। এরপর পরিবহন খরচ যোগ করে নিজেদের লাভ রেখে ট্যানারির মালিকদের কাছে তাঁরা চামড়া বিক্রি করেন। গত বছর ঈদুল আজহায় প্রথমপর্যায়ে ছোট ব্যবসায়ীরা খুচরাপর্যায়ে ঢাকার মধ্যে প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়া কিনেছিলেন ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। ঢাকার বাইরে এ দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। বাংলাদেশ ফিনিশডস্ লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আওয়াল কালের কণ্ঠকে বলেন, গতবার যেখানে প্রতি বর্গফুট ফিনিশড চামড়ার দাম ছিল দুই থেকে চার ডলার, সেখানে গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে দেড় ডলার দামে বিক্রি হয়েছে। সোসাইটির প্রচার সম্পাদক সঞ্জয় ঠাকুর কালের কণ্ঠকে বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীদের সারা বছর ব্যবসা কেমন যাবে, তা ঈদে চামড়া কেনার ওপর নির্ভর করে। এ সময় অর্থ সংকটও দেখা যায় । চলতি বছর ৩২৫ কোটি টাকা ঋণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এখনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। অতি দ্রুত যাতে এ অর্থ চামড়া ব্যবসায়ীদের হাতে আসে, তার দাবি জানান তিনি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া কেনার চেষ্টা করছেন; কিন্তু প্রতিবেশী দেশে চামড়া আমাদের দেশের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হবে। তাই সীমান্ত পথে প্রচুর চামড়া পাচার হয়ে যাবে। এতে চামড়া ব্যবসায়ীরা আরো লোকসানে পড়বেন। এতে বাজারে কাঁচা চামড়ার সংকট তৈরি হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
সারা বছরের কাঁচা চামড়ার জোগানের প্রায় ৮০ শতাংশই সংগৃহীত হয় কোরবানি ঈদের সময়। প্রতিবছরই কোরবানির পশুর চামড়া পাচারের অভিযোগ উঠে। এতে সংকটে পড়ে রপ্তানিমুখী ট্যানারি শিল্প। এ বছর যাতে চামড়া দেশের বাইরে পাচার না হতে পারে, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল ব্যবসায়ীদের জানান।

No comments

Powered by Blogger.