ডিসিসি দু’ভাগ করার আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আইনটি পাস করতে এখন সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। গতকালের বৈঠকে ২০১২ সালের সরকারি ছুটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এদিকে সূত্র জানিয়েছে, ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।


প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেনসাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তগুলো জানান।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত আইনে ঢাকা মহানগরের ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে দক্ষিণে একটি এবং ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে উত্তরে আরেকটি সিটি করপোরেশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এক কোটি মানুষ অধ্যুষিত ঢাকা নগরীর বাসিন্দাদের সেবার মান বাড়াতেই এ পদক্ষেপ বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তবে বিরোধী দল এর সমালোচনা করছে। বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ ডিসিসি’র কাউন্সিলরদের এতে আপত্তি রয়েছে। ডিসিসি বিভক্তির প্রতিবাদে তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ মতান্তরে ১৬১০ সালে ঢাকার গোড়াপত্তন হয়। তখন ঢাকার নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর। ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৪৭ সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হয় ঢাকা শহরটি। ১৯৭৮ সালে পৌরসভা থেকে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন হয় ঢাকা। ১৯৯০ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নাম হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন।
মোশাররফ হোসেন ভূইঞা বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক ও বিকিরণ নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে আইনি কাঠামো উন্নয়নসহ পারমাণবিক ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদনের ফলে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজে আরও অগ্রগতি হবে।
বৈঠকে Cooperation Agreement on Regional Integrated Multihazard Early Warning System (RIMES)-এর সদস্যপদ গ্রহণ এবং চাঁদা প্রদানের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ফলে সুনামিসহ জলবায়ুজনিত দুর্যোগের পূর্বাভাস আগেই পাওয়ার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার নেটওয়ার্কের মধ্যেমে পাওয়া যাবে।
Agreement on Establishment SAARC Seed Bank-এর প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে। এর ফলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বীজের মান উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়বে এবং শষ্য উত্পাদন বাড়বে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন-২০১১, Policy and Strategy for Public Private Partnership (PPP) ২০১০ এবং এর আওতায় প্রণীত গাইডলাইনগুলোর সংশোধন, সাফটা চুক্তির আওতায় সেনসিটিভ লিস্ট ২০% হ্রাস করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অফার লিস্ট এবং ‘SAARC Agrement on Multilateral Agreement on Recognition of Conformity Assessment’ ও ‘SAARC agreement on Implementation of Regional Standards’ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
২০১২ সালের ছুটি
গতকালের মন্ত্রিসভায় ২০১২ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী বছর সাধারণ ছুটি হবে ১৪ দিন এবং নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি হবে আট দিন। তবে এর মধ্যে ছয়দিন সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়ায় প্রকৃত সরকারি ছুটি ১৬ দিন হবে।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় ৮০৪টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে, ৭৩৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হারে মন্ত্রিসভা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০০৯ সালে মন্ত্রিসভার ৫০টি, ২০১০ সালে ৪৫টি এবং চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২২টি ও জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৮টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে মন্ত্রিসভার মোট ১২৫টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০০৯ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ওই বছর মন্ত্রিসভায় ৩১৬টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার মধ্যে ৩০৫টি বাস্তবায়িত হয়। ২০১০ সালে মন্ত্রিসভায় ৩১১টি সিদ্ধান্ত হয়। এর বাস্তবায়ন হয় ২৯১টি। বাস্তবায়নের হার ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস ১২২টি সিদ্ধান্তের মধ্যে একশ’টি বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবায়নের হার ৮২ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত নেয়া ৫৫টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৩৯টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ সময়ে বাস্তবায়নের হার ৭১ শতাংশ। চলতি বছরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কিছুটা কম হলেও এটা স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। শামীম ওসমান ও আইভী উভয়ই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। মন্ত্রিসভাকে তিনি বলেন, কমনওয়েলেথ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার সফরকালে পার্থের মেয়র তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে গিয়েছিলেন। ওই মেয়র ছিলেন একজন নারী। প্রধানমন্ত্রী জানান, পার্থের মেয়রকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, খুব সম্ভব দু-একদিনের মধ্যে আমাদের দেশেও একজন নারী মেয়র পেতে যাচ্ছি। জানা গেছে, এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠককে বলেন, নির্বাচনে এমন কোনো পরিবেশ সেখানে সৃষ্টি হয়নি যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন ছিল।

No comments

Powered by Blogger.