সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির জয় by রাশেদ মেহেদী ও এমএ খান মিঠু

ন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। বিশ্লেষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে প্রকৃত অর্থে দুটি পক্ষ ছিল_ একটি শান্তি এবং অন্যটি সন্ত্রাস। স্থানীয় সরকার নির্বাচন সত্ত্বেও সারাদেশে ঝড় তোলা নাসিক নির্বাচনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির বিজয় এসেছে বলে মনে করেন তারা। নারায়ণগঞ্জের দু'দশকের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।


টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ নাসিক নির্বাচনের ফল সম্পর্কে সমকালকে বলেন, এ নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আছে তাদের মনোনয়ন না দিয়ে সমাজসেবকদের মনোনয়ন দেওয়া। তাহলে জনগণ তা সাদরে গ্রহণ করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দল যাকে বলবে, তাকেই মেনে নেবে_ এ ধারণা ভেঙে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায় সমকালকে বলেন, এবারের নাসিক নির্বাচন হচ্ছে অশুভ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি ও শুভবুদ্ধির জয়। এটা শুধু নারায়ণগঞ্জের জন্য নয়, সারাদেশের জন্যই একটা মডেল হয়ে থাকবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা নাগরিক কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউর রাবি্ব সমকালকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে দেশবাসীকে। এখন জনগণকে ভালোবেসেই নেতা হতে হবে, সন্ত্রাস কিংবা অন্য কোনোভাবে নেতা হওয়া যাবে না। দল ভালো মানুষকে সমর্থন না দিয়ে অভিযুক্ত কাউকে সমর্থন দিলে মানুষ তা গ্রহণ করবে না। নাসিক নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ১৬৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১৪০টিতেই জিতেছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সাবেক এ পৌর মেয়রের জনপ্রিয়তা এমন উচ্চতায় পেঁৗছে গেছে যে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান তার নিজের কেন্দ্রেও পরাজিত হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, শামীম পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। পক্ষান্তরে বিজয়ী আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, শামীম ওসমান এবং তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনের আগের রাতে নাটকীয়ভাবে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৈমুর। যদিও শুরু থেকে তিনি সমান গুরুত্ব দিয়েই গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন।
যে কারণে সন্ত্রাস বনাম শান্তির ভোটযুদ্ধ : ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং
সাধারণ মানুষের কাছে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ওই সময়টি ছিল দুঃস্বপ্নের শামিল। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামীম ওসমান শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন এবং ওই রাতেই পালিয়ে যান। পরে পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় শামীম নারায়ণগঞ্জে ফেরেননি। বিরোধী দল হিসেবে রাজপথের আন্দোলনে ওই পাঁচ বছর ওসমান পরিবারের কাউকে দেখা যায়নি বলে জানান নারায়ণগঞ্জের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। অথচ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে তার ভাই নাসিম ওসমান মহাজোট প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর শামীম ওসমান আবার ফিরে আসেন। এবার তার ছোট ভাই সেলিম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি হন। দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে যায়। তারপর আবার ২০০১-এর আগের চিত্র। আবার টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির দাপট। দেখা যায় বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় যে আওয়ামী লীগ নেতারা রাজপথে ছিলেন, তারা যেন বিরোধী দলে চলে গেছেন শামীমবিরোধী হওয়ার কারণে। একদিকে সন্ত্রাস, অন্যদিকে দল ক্ষমতায় থাকার সময় ত্যাগী নেতাদের বিরোধী পক্ষে রাখার ওসমান পরিবারের এ অপকৌশল সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও অনেক দূরে ঠেলে দেয় তাদের। যে কারণে দল থেকে বহিষ্কারের কঠোর হুশিয়ারি সত্ত্বেও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এসএম আকরাম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএ আরাফাতসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে কাজ করেন। এ অবস্থায় শামীম এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।
অন্যদিকে ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর টানা আট বছর দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি আরও উন্নত করেছেন শিক্ষিত, ভদ্র এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। দায়িত্ব পালনের সময় তিনি কোনো ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেননি। বরং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে সুশীল সমাজেরও আদর্শ প্রতীক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা জানান, যেখানেই সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা কিংবা অভাব-অভিযোগের কথা শুনেছেন, সেখানেই ছুটে যেতেন আইভী। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ঠিকাদারদের উন্নয়ন কাজ তদারক করতেন। কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করতেন। কোনো বিষয়ে কাজ করতে না পারলে সে বিষয়টিও কারণসহ ব্যাখ্যা করতেন তিনি। র‌্যালির বাগান এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে শামীম ওসমানের মুখের ওপর কথা বলতেন একমাত্র আইভী। অন্যরা আড়ালে বলতেন, শামীম ওসমান সন্ত্রাস করছেন। আইভী শামীম ওসমানের দিকে আঙুল তুলে বলেন, এবার সন্ত্রাস ছেড়ে দিন। সন্ত্রাস করে পার পাওয়ার দিন শেষ। শামীম ওসমানের মুখোমুখি দাঁড়ানোর এ সাহসের কারণে আইভীকে অনেকে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে ব্যাডা একজনই আছে, তার নাম আইভী।' আইভীর এ ভাবমূর্তিই এবারের ভোটযুদ্ধে তাকে দারুণভাবে এগিয়ে দেয়।
অন্য প্রার্থী তৈমুর আলমের ভাবমূর্তিও ভোটারদের সামনে পরিচ্ছন্ন ছিল না বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। তারা বলেন, বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তৈমুরের নিয়োগ-বাণিজ্যের কথা নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে ওপেন সিক্রেট। ছোট হলেও তারও আছে ক্যাডার বাহিনী। এ কারণে আইভী হয়ে ওঠেন সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তি ও শুভবুদ্ধির প্রতীক।
ভোট বিশ্লেষণ : ৬৮ বর্গমাইলের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন চারটি থানা নিয়ে গঠিত। সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর এবং ফতুল্লা থানা এলাকার ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮৮ ভোটারের সমর্থন নিজের অনুকূলে আনতে সচেষ্ট ছিলেন প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী। তাদের হিসাবও ছিল চার থানাকেন্দ্রিক। তাদের নজর ছিল নিজ ভোটব্যাংক অক্ষুণ্ন রেখে প্রতিপক্ষের ভোটব্যাংকে হানা দেওয়া। ভোটের আগে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষও হিসাব কষেছেন কোন এলাকায় কার ভোট বেশি আর কার ভোট কম।
রোববারের অভূতপূর্ব নির্বাচন সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। চারটি থানা এলাকায় বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সর্বশেষ মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এক লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। মেয়র পদে অন্য চার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকার, আতিকুল ইসলাম জীবন, আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি এবং শরীফ মোহাম্মদ তাদের জামানত হারিয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় ৬৩টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৬। এর মধ্যে পুরুষ ৭২ হাজার ২৬২ এবং নারী ভোটার ৭২ হাজার ১২৪। সদর থানায় ৪২টি ভোটকেন্দ্রে এবং ফতুল্লা মডেল থানা এলাকায় ১৭টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ২২১। এর মধ্যে পুরুষ ৮২ হাজার ৮৪৩ এবং নারী ৭৯ হাজার ৩৭৮। বন্দর থানা এলাকায় ৪১টি ভোটকেন্দ্র এলাকায় মোট ভোটার ৯৭ হাজার ৫৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ২৩৩ এবং নারী ৪৯ হাজার ৩৪৮ জন।
চারটি থানায় ভোটের ব্যবধান সম্পর্কে নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণকারী রাইসুল ইসলাম রুশদ সমকালকে বলেন, ১৬৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ডা. আইভী ১৪০টি কেন্দ্রে বিজয়ী হয়েছেন। শামীম ওসমান ২৩টি কেন্দ্রে বিজয়ী হয়েছেন। তবে সেসব কেন্দ্রে ব্যবধান ছিল খুবই কম। ২ ভোট থেকে সর্বোচ্চ দেড়শ' ভোট। ডা. আইভী হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে শামীম ওসমানকে পেছনে ফেলেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জে ৬৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে শামীম ওসমান মাত্র ২২টি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ভোট পান। বাকি ৪০টি কেন্দ্রে তিনি ডা. আইভীর তুলনায় খুবই কম ভোট পান। নির্বাচনের আগে ধারণা করা হচ্ছিল, শামীম ওসমান সিদ্ধিরগঞ্জে খুবই ভালো করবেন। অথচ দেখা যায় এ এলাকার ১ লাখ ৪৪ হাজার ভোটের মধ্যে তিনি সাকল্যে ৪০ হাজার ২৮৮ ভোট পেয়েছেন। এ থানা বিএনপির শক্ত ঘাঁটি বলেও বিবেচিত। ধারণা করা হয়েছিল বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার এখানে ভালো ভোট পাবেন। শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে বিএনপির ভোটগুলো ডা. আইভীর পক্ষে গেছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। এ থানায় তৈমুর প্রায় ২ হাজার ভোট পান।
সদর থানায় ৪২টি ভোটকেন্দ্রে এবং ফতুল্লা মডেল থানা এলাকায় ১৭টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ২২১। ফতুল্লা মডেল থানা এলাকায় স্থানীয় সাংসদ কবরী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ডা. আইভীর পক্ষে কাজ করেন।
সদর থানায় শামীম ওসমান তার নিজ ভোটকেন্দ্র বার একাডেমী স্কুলেও পরাজিত হন। চাষাঢ়া এলাকায় তার প্রভাবাধীন দুটি কেন্দ্রে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। মা আমেনা মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুল কেন্দ্রে আট এবং জালকুড়ি পশ্চিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মহিলা ভোটকেন্দ্রে তিনি মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে ডা. আইভী থেকে এগিয়ে ছিলেন।
বন্দর থানা এলাকায় ৪১টি ভোটকেন্দ্র এলাকায় মোট ভোটার ৯৭ হাজার ৫৮১। এখানে ডা. আইভী মাত্র একটি কেন্দ্রে শামীম ওসমানের চেয়ে কম ভোট পান। বাকি ৪০টি কেন্দ্রে তিনি শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পেছনে ফেলেন। এখানকার স্থানীয় সাংসদ মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমানের বিভিন্ন ব্যর্থতার প্রভাব শামীমের ওপর পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ভোটের সব অঙ্ক ওলটপালট হয়ে গেল :মূলত এলাকা ভিত্তিতেই ভোটের অঙ্ক করছিলেন দুই বড় দলের অভিজ্ঞ ও দক্ষ রাজনীতিবিদরা। সে হিসাব করে তারা প্রার্থী মনোনয়নও দেন। স্থানীয়ভাবে অবশ্য নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের মধ্যে ছিল অভিন্ন সুর। সন্ত্রাস নয়, দুর্নীতি নয়, একজন ভালো মানুষ চাই। সেই সুরের উন্মাদনাতেই ৩০ অক্টোবরের নির্বাচনে শামীম ওসমানের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায়ও আইভীর চেয়ে বেশি ভোট পাননি শামীম ওসমান। শহরে আগে থেকেই আইভী এগিয়ে ছিলেন। নির্বাচনে সেই এগিয়ে থাকা হাতে-কলমে প্রমাণ হয়েছে। শহর এলাকায় শামীম ওসমান সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কারণে বিএনপির ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত কদমরসুলেও একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন আইভী। যে কারণে ভোটের ব্যবধান লাখে পেঁৗছে। ৩০ অক্টোবরের নির্বাচনে প্রায় ২ লাখ নারী ভোটারের মধ্যে ৬০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। আর ভোটের ফল বলে দেয়, নারী ভোটের অধিকাংশ আইভীর দিকেই গেছে।
পারবেন কি আইভী :নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর অশুভর বিরুদ্ধে আইভীর বক্তব্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে তো বটেই, দেশের মানুষকেও মুগ্ধ করেছে। অতীতে দেখা গেছে, জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অনেক নেতাই নির্বাচনে জেতার পর ভুল পথে গেছেন। পরের নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে খলনায়কে পরিণত হয়েছেন। যদিও আট বছর পৌর মেয়র থাকার সময় আইভী তার ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছেন এবং উজ্জ্বলতর ভাবমূর্তি নিয়েই নাসিক নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে লড়েছেন। প্রলোভন, ক্ষমতার অপব্যবহার না করে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে পরবর্তী পাঁচ বছর তার অবস্থান ধরে রাখতে পারলে তিনি আরও ভালো উদাহরণ জাতির সামনে তুলে ধরতে পারবেন_ এমন অভিমত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশ্লেষক, সাধারণ মানুষ ও নারায়ণগঞ্জবাসীর।

No comments

Powered by Blogger.