অর্থমন্ত্রী মুহিত-পদ্মা সেতু নিয়ে চিঠির উত্তরের অপেক্ষা করছি

দ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা সহসা কাটছে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সংস্থাটির কাছ থেকে চিঠির উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। চিঠি পাওয়ার পর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।জানা যায়, পদ্মা সেতুর অনিয়ম তদন্তে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কানাডার পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। দেশ-বিদেশের এ দুটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা না করে বিশ্বব্যাংক অর্থমন্ত্রীর চিঠির কোনো উত্তর দেবে না।


গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান।
বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আর বিশ্বব্যাংক থেকে চিঠির কোনো উত্তরও পাঠানো হয়নি। চিঠির উত্তর পাওয়ার পর তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে।'
অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেন, পদ্মা সেতু বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বৈঠকের সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আরস্তু খান উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে আলোচনা হলেও অ্যালেন গোল্ডস্টেইনের কাছে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়টি তোলেন অর্থমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে চিঠির উত্তর কবে পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে ধারণা চান অর্থমন্ত্রী।
জবাবে গোল্ডস্টেইন আবুল মাল আবদুল মুহিতকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত চলছে। এ ছাড়া কানাডার পুলিশ যে তদন্ত শুরু করেছে, তা এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মেলে কি না, তা না দেখে বিশ্বব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তাই চিঠির উত্তরের জন্য এ দুটি তদন্ত প্রতিবেদন পেতে অপেক্ষা করতে হবে সরকারকে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক এম এন প্রসাদের ঢাকা সফরকালে আয়োজিত নৈশভোজে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের চিঠির জন্য অপেক্ষা করছি। চিঠি পাওয়া গেলে সংস্থাটির অবস্থান জানা যাবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরবেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।'
গত রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জোর দিয়ে বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মিত হবে। এ সেতু নির্মাণের জন্য বিকল্প অর্থায়ন খোঁজার কোনো প্রয়োজন নেই।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতুর জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আগমুহূর্তে বাছাই করা ছয়টি কম্পানিকে বিশ্বব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করে। এর মধ্যে কানাডিয়ান কম্পানি এসএনসি লাভালিনের ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। পরে বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে ওই কম্পানির কানাডার কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। আর তখনই পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ঋণ স্থগিত করে।
চলতি মাসের প্রথম দিকে দুদক পদ্মা সেতু নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত শুরু করে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংস্থাটির তদন্ত শেষ করার কথা রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৫২ শতাংশ। প্রয়োজনে আরো ৩০ কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬১ কোটি ৫০ লাখ, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ৪০ কোটি ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেবে। সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এডিবি ও জাইকা আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ বাড়িয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.