শিক্ষকদের বেতন ঈদের আগে পাওয়া নিয়ে সংশয়-বিশেষ ব্যবস্থার দাবি by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

দুল আজহার আগে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) খামখেয়ালির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষক নেতারা 'বিশেষ ব্যবস্থায়' বেতন-ভাতা পাওয়ার দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, আগামী ৭ নভেম্বর ঈদুল আজহা।শিক্ষকরা বলছেন, ব্যাংক থেকে বেতন তোলার শেষ তারিখ আগামী ৩ নভেম্বর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার। হাতে আছে মাত্র দুদিন। এ সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই বেতন তোলা সম্ভব নয়।


শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সময়মতো পাওয়া নিয়ে মন্ত্রণালয় ও মাউশি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (নজরুল) সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তোলা অনিশ্চিত। ঈদের আগে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার শেষ তারিখ ৩ নভেম্বর। এত কম সময়ের মধ্যে শিক্ষকরা টাকা তুলতে পারবেন না। এতে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কোনো কোনো শিক্ষক ঈদ উদ্যাপনের জন্য টাকা ধার করেছেন বলেও তিনি জানান।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেছেন, হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে টাকা পাঠানো হয়েছে। ঈদের আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তুলতে সমস্যা হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত ২৬ অক্টোবর অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং জনতা ও সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্মারকে মোট ২৪টি চেক হস্তান্তর করে। এতে বলা হয়, আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যাংক থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরের সাহায্যে অক্টোবরের বেতনের সরকারি অংশ তুলতে পারবেন।
মাউশি ও মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২৬ অক্টোবর ব্যাংকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাঠানো হলেও ১ নভেম্বরের আগে ব্যাংকগুলো টাকা ছাড় করবে না। এ ছাড়া ১ নভেম্বর ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থেকে স্থানীয় কার্যালয়ে টাকা ছাড় করা হবে। তারপর শিক্ষকরা বেতন বিল করে ব্যাংকে গিয়ে জমা দিলে টাকা তুলতে পারবেন।
মাউশির মতে, এ নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে শিক্ষক-কর্মচারী ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সময় পাবেন মাত্র দুদিন। অর্থাৎ ঈদের আগে কর্মদিবস থাকবে মাত্র দুটি। অর্থাৎ ২ ও ৩ নভেম্বর। শিক্ষকরা বলছেন, এত কম সময়ের মধ্যে ব্যাংক থেকে বেতন-ভাতা তোলা সম্ভব হবে না। ফলে ধার করে টাকা নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করতে হবে।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মীরপুর এফএন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আরজু মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, এ সময়ের মধ্যে টাকা তোলা সম্ভব নয়। এ অবস্থা শুধু এ বছর নয়, প্রতি বছরই হয়। ফলে বেতনের টাকা নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করা সম্ভব হয় না। একই জেলার লাখাই উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, 'বেতন তুলতে পারব না ভেবে বেতনের চেক 'বন্ধক' রেখে টাকা এনেছি। এ টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ মেটাব।' একই কথা বলেছেন শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, বরিশালের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তাঁরা সবাই বলেছেন, ঈদের আগে টাকা পাওয়া নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থা না করলে বেতন-ভাতা পাওয়া যাবে না।
শিক্ষকরা বলেছেন, গত বছরও এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ঈদুল আজহার আগে শিক্ষকদের বেতন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতির সমাধান করেন।
জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ঈদের আগেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হোক। যাতে শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেয়ে ঈদ উদ্যাপন করতে পারেন।' তিনি বলেন, শিক্ষকদের পাওনা নির্ধারিত সময়ে না দিলে তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন কিভাবে?
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়কারী মো. সেলিম ভুঁইয়া বলেন, সরকার একদিকে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে, অন্যদিকে শিক্ষকদের পাওনা দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

No comments

Powered by Blogger.