লাইসেন্স নবায়নে ১৩৫৮ কোটি টাকা জমা দিল গ্রামীণফোন-বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেল দিয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকা করে by কাজী হাফিজ

দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণফোন তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) লাইসেন্স নবায়নের জন্য গতকাল সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৫৮ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জমা দিয়েছে। অন্য তিনটি অপারেটর বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেল জমা দিয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকা করে।এ বিষয়ে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা চার অপারেটরের কাছ থেকেই টাকা পেয়েছি। তবে কোন অপারেটর কোন হিসাবে এ টাকা জমা দিয়েছে, তা পরে পরীক্ষা করে দেখা হবে।'


গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা কাজী মনিরুল কবির কালের কণ্ঠকে জানান, লাইসেন্স নবায়ন নীতিমালা অনুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাঁরা গতকাল প্রথম কিস্তির ৪৯ শতাংশ টাকা জমা দিয়েছেন। আদালতের আদেশ অনুসারে ভ্যাটের ১৫ শতাংশ টাকা বাদ রেখেই ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'আজ (সোমবার) সকালে আমরা স্পেকট্রাম ফির প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় বাড়ানোর চিঠি পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি থাকায় আগের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ওই টাকা জমা দেওয়া হয়।' বাংলাদেশের ইতিহাসে বেসরকারি খাত থেকে সরকারকে এত বেশি পরিমাণ টাকা এক দিনে পরিশোধের ঘটনা এই প্রথম।
প্রসঙ্গত, লাইসেন্স নবায়ন নীতিমালা অনুসারে বিটিআরসি ভ্যাট প্রদানের দায়দায়িত্ব মোবাইল ফোন অপারেটরদের ওপর রেখে কোনো ধরনের বিয়োজন ছাড়াই এ টাকা চেয়েছিল। তবে এ চাহিদার বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন আদালতের শরণাপন্ন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ অক্টোবর বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ সমন্বিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন, ভ্যাটের ব্যাপারে ২০০৮ সালের ৩০ জুন জারি করা এসআরও অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে আরো জানিয়েছিল, ২০০৮ সালের বরাদ্দ স্পেকট্রাম থেকে মার্কেট কম্পিটিশিন ফ্যাক্টর অনুযায়ী বাড়তি ৩৮৪ কোটি টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া একটি সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট অনুসারে গত ১৫ বছরের বকেয়া রাজস্ব হিসাবে গ্রামীণফোনের কাছে আরো তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকার দাবি রয়েছে বিটিআরসির। এ দুটি দাবির বিরুদ্ধেও আদালতের শরণাপন্ন হয় গ্রামীণফোন এবং ওই সব দাবির কার্যকারিতার ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।
এদিকে বিটিআরসি সূত্র জানায়, বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেল সাড়ে আট কোটি টাকা করে জমা দিয়েছে লাইসেন্স নবায়ন ফি হিসেবে। এ ফির পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে ১০ কোটি টাকা। ভ্যাটের ১৫ শতাংশ বাদ রেখেই সাড়ে আট কোটি টাকা করে জমা দিয়েছে এ তিন মোবাইল ফোন অপারেটর। স্পেকট্রামের জন্য টাকা জমা দিতে বর্ধিত সময়ের সুযোগ নেবে তারা। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সাত দিন সময় বাড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর লাইসেন্স নবায়নের চূড়ান্ত নীতিমালা প্রকাশ করে বিটিআরসি। নীতিমালা অনুযায়ী আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চার মোবাইল ফোন অপারেটরকে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করতে বলা হয়। তারা আবেদন করে ১০ অক্টোবরে। গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসি এই চার অপারেটরকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, লাইসেন্স নবায়নের জন্য নীতিমালার শর্ত অনুসারে সব ধরনের ফির প্রথম কিস্তির ৪৯ শতাংশ টাকা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে হবে। এরপর দ্বিতীয় কিস্ততে ১৭ শতাংশ ১৮০ দিনের মধ্যে, তৃতীয় কিস্ততে আরো ১৭ শতাংশ ৩৬০ দিনের মধ্যে এবং শেষ কিস্তি হিসেবে বাকি ১৭ শতাংশ ৫৪০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
লাইসেন্স নবায়নে অপারেটরদের সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে স্পেকট্রামের জন্য। মার্কেট কম্পিটিশন ফ্যাক্টর বা যার গ্রাহক যত বেশি তাকে তত বেশি টাকা দেওয়ার নীতি অনুযায়ী গ্রামীণফোনকে তাদের ১৪ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য দিতে হচ্ছে মোট তিন হাজার ২৪১ কোটি দুই লাখ টাকা। বাংলালিংকে তাদের ১২ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য দিতে হবে এক হাজার ৯৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। রবিকে তাদের ১২ দশমিক ৮ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য দিতে হবে এক হাজার ৯০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং সিটিসেলকে ১০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য দিতে হবে সবচেয়ে কম ৪৫০ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.