পীরগঞ্জে স্কুলের সেপটিক ট্যাংক থেকে চিকিত্সকের কঙ্কাল উদ্ধার : রাজধানী ও টঙ্গীতে দুই ছাত্র, সাভারে ডাকাত সন্দেহে যুবকসহ ৬ খুন

রাজধানীর পল্লবীতে গলাকেটে ও গাজীপুরের টঙ্গীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুই ছাত্রকে। এছাড়া সাভারে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে যুবকসহ পৃথক ঘটনায় আরও ৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে রংপুরের পীরগঞ্জের একটি স্কুলের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে অপহরণের দুই মাস পর উদ্ধার করা হয়েছে এক পল্লী চিকিত্সকের কঙ্কাল। বিস্তারিত আমার দেশ-এর স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজধানীর পল্লবী এলাকায় মোহাম্মদ শাওন (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ গতকাল বিকালে মিরপুর সেনানিবাসের একটি কোয়ার্টার থেকে কিশোরের লাশ উদ্ধার করে।


পুলিশ জানায়, বিকাল ৫টায় মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস (এমইএস) কোয়ার্টারের তৃতীয় তলা থেকে শাওনের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। শাওন তার নিজ কক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল। এ সময় শাওন বাসায় একা ছিল। তার বাবা-মা দুজনেই বাইরে ছিলেন। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।
পুলিশ সন্দেহ করছে, পারিবারিক শত্রুতার কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। সিআইডি’র একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ ডিবি ও র্যাবের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।
মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, শাওন তার মা-বাবাসহ পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের সেনানিবাসের কোয়ার্টারে থাকতেন। তার মা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সিভিল স্টাফ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বাবাও চাকরিজীবী। গতকাল সকালে দুজনেই কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দিনের যে কোনো সময় দুর্বৃত্তরা ওই বাসায় ঢুকে শাওনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে বাসা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
পল্লবী থানার ওসি মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, নিহত শাওন মিরপুর ১৪ নম্বরের বিএন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। শাওনের বাবা একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। শাওনকে বাসার বটি দিয়ে জবাই করা হয়েছে।
টঙ্গী : টঙ্গীতে মোবাইল ফোনের জন্য বন্ধুর হাতে প্রাণ দিতে হলো এক মাদরাসার ছাত্রকে। তার নাম রমজান আলী (১৩)। পুলিশ এ ঘটনায় নাজমুল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। তার বাবা-মা পলাতক।
নিহতের বড় ভাই এরশাদ জানান, গত শুক্রবার সকাল ১০টায় রমজানকে আউচপাড়ার সুরতরঙ্গ রোডের অভিযান ৬৫নং বাসা থেকে তার বন্ধু নাজমুল তাকে ডেকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও রমজান বাসায় ফিরে না আসায় আত্মীয়-স্বজন বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পুরো টঙ্গী এলাকায় মাইকিং করে। তার পরও তাকে না পেয়ে শনিবার নাজমুলের কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলের বাসায় যায়। সেখানে নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে রমজান আলীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, মোবাইল ফোন না দেয়ায় রমজানকে হাত পা বেঁধে কাঠ দিয়ে মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ ঘরের পাশে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় সে।
খবর পেয়ে টঙ্গী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রোববার রাত ১২টায় লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর মর্গে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই এরশাদ বাদী হয়ে টঙ্গী থানায় রমজান, তার বাবা জলিল ও মা লিলিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। রমজান স্থানীয় আউচপাড়া কাজু খা এতিম খানা মাদরাসার ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল।
সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা) ও পীরগঞ্জ (রংপুর) : গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ছান্দিয়াপুর গ্রামের পল্লী চিকিত্সক তারেকুল ইসলাম তারা (৩৫) অপহরণের ২ মাস ১৮ দিন পর তার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার গঙ্গারামপুর বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে পুলিশ তার কঙ্কাল উদ্ধার করে।
সাদুল্যাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) শাহীন রেজা জানান, রোববার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তির মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গতকাল দুপুরে ওই স্কুলের পায়খানার সেপটিক ট্যাংক থেকে তার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় ওই পল্লী চিকিত্সকের ব্যবহৃত প্যান্ট, গেঞ্জি এবং প্যান্টের পকেটে তার দোকানের চাবির গোছা পাওয়া যায়। পরে খবর পেয়ে তার ভাতিজা রবিউল আকন্দ এসে তাকে শনাক্ত করে। পরে উদ্ধারকৃত কঙ্কাল ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গত ১২ আগস্ট সকালে নিজ দোকানের ওষুধ কিনতে চিকিত্সক তারেকুল বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে উপজেলার মিরপুর হাটে যায়। এরপর তিনি আর ফেরেননি। ১৭ আগস্ট একদল অপহরণকারী মোবাইল ফোনে তারেকুলের বড় ভাই রজ্জব আলীর কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তারেকুলকে হত্যা করা হবে বলে জানায়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে নানারকম নাটকীয়তার পর গত ২২ আগস্ট রজ্জব আলী বাদী হয়ে থানায় নিয়মিত অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় এ পর্যন্ত পুলিশ মোট ৬ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
সাভার : সাভারের শ্রীখণ্ডিয়া এলাকায় রোববার ডাকাত সন্দেহে অজ্ঞাত এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সালেপুর ব্রিজের নিচ থেকে অপর এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, ভোর রাতে ৮-১০ জনের ডাকাতদল গ্রামে ঢুকে পড়লে তারা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় এক ডাকাত ধরা পড়ে। পরে বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে সে মারা যায়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিহত যুবক ডাকাত দলের সদস্য কিনা তা তদন্তের পর বুঝা যাবে। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের নান্দাইলে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে এক ব্যক্তি খুন হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম হোসেন মিয়া (৩২)। গতকাল সন্ধ্যায় উপজলোর বেতাগৈর ইউনিয়নের পলাশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, নান্দাইলের পলাশিয়া গ্রামে গতকাল সন্ধ্যায় ছাগলে ধান খাওয়া নিয়ে প্রতিবেশী আবুল কাশেমের সঙ্গে একই গ্রামের হোসেন মিয়ার ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে কাশেমের লোকজন বল্লম দিয়ে হোসেন মিয়াকে আঘাত করে। স্থানীয় লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নান্দাইল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
চাটমোহর (পাবনা) : চাটমোহর পৌর এলাকার বালুচরে গতকাল ভোরে অজ্ঞাত পরিচয় নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। পৌর বালুচরের আবদুল করিম জানান, ভোর ৬টার দিকে এলাকার বদ্ধ বড়াল নদী ঘাটের পাশে স্থানীয়রা ওই নবজাতকের লাশ দেখতে পায়।
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলাম জানান, থানায় এ ধরনের কোনো খবর কেউ জানায়নি।
দিনাজপুর : দিনাজপুরের সদর উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের উত্তম কুমার রায়ের সঙ্গে তার চাচাতো ভাই ননী গোপাল রায়সহ ৫ জনের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। রোববার রাতে উত্তম কুমার রায়ের স্ত্রী শ্রীমতি অলোকা রানী রায় (২৭) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে চাচাতো ভাইরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে তার লাশ পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.