চট্টগ্রামে সন্ত্রাসের আশঙ্কায় ২ শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী : ঋণ সুবিধা দাবি by মুস্তফা নঈম,

দ সামনে রেখে কোরবানির পশু চামড়া সংগ্রহকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসের আশঙ্কা করছে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এলাকার সন্ত্রাসীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ব্যবসায়ীদের ঢুকতে দেয় না। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এলাকার কোরবানি দাতাদের এক ধরনের জিম্মি করে পশুচামড়া কিনে নেয়। এতে করে বিক্রেতারা যেমন দাম পাননি তেমনি ব্যাপারীরাও ঠকছেন। এ ব্যাপারে সাধারণ চামড়া ব্যবসায়ীরা পুলিশ প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এত শঙ্কার মধ্যেও চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রতিবারের মতো এবারের কোরবানির ঈদেও চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে।


চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী আড়ত্দার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, তাদের সমিতি সদস্যসহ চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণকারী আড়ত্দার রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। সবাই মিলেই তিন লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে চামড়া সংগ্রহকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীর বেশকিছু স্থানে চামড়া ক্রয়ে বাধা, সন্ত্রাস ও চামড়া ছিনতাইয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টর ব্যবসায়ীরা।
মুসলিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে চামড়া ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ট্যানারি মালিকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে এই ব্যবসায় টিকে থাকা। তারা বকেয়া টাকা না দেয়ায় এর মধ্যেই অনেক আড়ত্দার পথে বসেছেন। সমিতির এই নেতা বলেন, ট্যানারি মালিকরা কোরবানি উপলক্ষে সরকারের নির্দেশে ঋণ পেলেও আড়ত্দাররা এই সুবিধা পায় না। তারা ব্যবসা করেন নিজের টাকায়। সরকারের উচিত আড়ত্দারদেরও ঋণ সুবিধা দেয়া। এতে অসাধু ট্যানারি মালিকদের প্রতারণার হাত থেকে আড়ত্দার ও ছোট চামড়া ব্যবসায়ীরা রক্ষা পাবেন।
নগরীর আতুরার ডিপো এলাকার একজন চামড়া ব্যবসায়ী আবুল কালাম আবু ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারি ও আড়তদারের নাম উল্লেখ করে বলেন, এসব ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের কাছে এই এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ বকেয়া টাকা পাওনা রয়েছে। বছরের পর বছর এসব টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না। কোরবানির ঈদে স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহের জন্য টাকা প্রদান করে থাকে। এছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন বড় আড়তদারও গ্রাম এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহকারী ছোট ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে বলে অভিযোগ করেন আবুল কালাম আবু। এদের মধ্যে হাজী আইয়ুব নামের একটি আড়তে ছোট ব্যবসায়ীদের প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আটকে আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে কোরবানির চামড়া নিয়ে মাস্তানি-সন্ত্রাস বন্ধের ব্যাপারে সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, কোরবানির দুই/তিন দিন আগে সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাবেন।
নগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) আমেনা বেগম জানিয়েছেন, ঈদের দিন নগরীতে যাতে পশু চামড়া নিয়ে কোনো ধরনের সংঘাত সংঘর্ষ না হয়, ব্যবসায়ীরা যাতে নিরাপদে চামড়া সংগ্রহের কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে জেলা পর্যায়ে কোরবানির দিন চামড়া ক্রয়ে বাধা কিংবা ছিনতাই রোধে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জেড এম মোরশেদ। তিনি জানান, সম্ভাব্য সব জায়গায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরী, জেলা এবং পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকে এবারও তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, কোরবানি উপলক্ষে এখনও চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়নি। দুই/তিন দিনের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা নতুন দাম ঘোষণা করবেন।

No comments

Powered by Blogger.