আমি আওয়ামী লীগের নই জনগণের মেয়র :আইভী by নিয়াজ মোর্শেদ,

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে দেশের একমাত্র নারী মেয়র হিসেবে বিজয়ী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আমি যখন মেয়রের চেয়ারে বসব, তখন আওয়ামী লীগের মেয়র নই; নারায়ণগঞ্জবাসীর মেয়র। সে সময় আমি দলীয় পরিচয়ের ঊধর্ে্ব থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং নাসিকের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ডা. আইভী বলেন, অতীতে যেভাবে দল-মতের ঊধর্ে্ব থেকে জনগণের সেবা করেছি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। নির্বাচনের আগে জনগণকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, শামীম ভাই ও তৈমুর কাকাকে সঙ্গে নিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।


সমকালের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সর্বপ্রথম তাকে ফোনে অভিনন্দন জানান। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা তাৎক্ষণিক তাকে ফোনে অভিনন্দন জানাননি। উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে আইভী বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবহেলিত অঞ্চল উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি অন্যান্য এলাকার উন্নয়ন কাজও বজায় থাকবে। তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ কমিটি থাকবে। সে সঙ্গে যে এলাকায় কাজ হবে সেখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে পৃথক কমিটি করা হবে। উন্নয়ন কাজ যেন মানসম্মত হয় সে জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন। কাজ করতে গেলে সমস্যা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগে আছি, থাকব। আমাদের পরিবার কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেইমানি করেনি। যে দলকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন সে দলটি কেন তাকে
সমর্থন জানায়নি, এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারিনি কেন দল আমাকে সমর্থন না জানিয়ে একজন গডফাদারকে সমর্থন জানিয়েছিল। আমি তো কখনও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। পরক্ষণেই নিজের আবেগ সামলে বলেন, আমি যখন মেয়রের চেয়ারে বসব তখন আমি আওয়ামী লীগের মেয়র নই, নারায়ণগঞ্জবাসীর মেয়র। সে সময় আমি দলীয় পরিচয়ের ঊধর্ে্ব থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের জনগণ আমাকে যে ভালোবাসা দেখিয়েছে তাতে আমি কৃতজ্ঞ। আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরাই গড়ব।
আইভী নির্বাচনে বিজয়ের রেশ না কাটতেই কঠিন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন সবাইকে। গতকাল তিনি তার বাসভবনে সমকালসহ কয়েকটি মিডিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তবে সিটি করপোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেই একের পর এক কাজ করে যাব। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহযাত্রী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী শামীম ওসমান ও তৈমুর আলম খন্দকারকে পাশে চান তিনি। এলাকার রাস্তা, ড্রেনেজ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে চান বলে জানান সেলিনা হায়াৎ আইভী ।
ডা. আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসী আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছে। সবাইকে নিয়ে সমন্বিত উন্নয়ন করতে চাই। আমার কাছে কোনো দলমতের বাছ-বিচার নেই। পুরো নারায়ণগঞ্জের পাড়া-মহল্লা পরিদর্শন করেছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলব আর ঈদের পর নারায়ণগঞ্জের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শহরের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেব।
আইভী নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশে বলেন, মেয়র হিসেবে আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। আমি আমার নীতি ও আদর্শ ঠিক রাখব। দলমতের ঊধর্ে্ব উঠে কাজ করব।
নবনির্বাচিত এ মেয়র বলেন, আমি সারাজীবনই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলাম। এখনও আছি। আমার কোনো বাহিনী থাকবে না। আমি সবসময় জনতাকে নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করব।
ডা. আইভী বলেন, জনগণ কখনও ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না। নির্বাচনের ফলই তার প্রমাণ। সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, কমিশনের উদ্যোগের কারণে জনতা ভয়ভীতির ঊধর্ে্ব উঠে ভোট দিয়েছে। এ জনতার ভোটেই ফল নির্ধারিত হয়েছে।
রোববারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। সেনা মোতায়েন না হওয়ায় ভোটগ্রহণ শুরুর সাত ঘণ্টা আগে সরে দাঁড়ান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪ লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৯৩ জন, যা মোট ভোটারের ৬৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে বৈধ হিসেবে গণ্য হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩২৯টি ভোট।
৩৭ বছর আগে আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকাও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়াই স্বাধীন বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বাবার প্রসঙ্গ টেনে আইভী বলেন, বাবার পর এ পৌরসভায় যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ধারাবাহিকতায় আমি নগরীর উন্নয়নে কাজ করে যাব।
ডা. আইভী বলেন, এ বিজয় জনগণের বিজয়। জনগণ আমাকে তাদের সেবা করার যে রায় দিয়েছে, এতে আনন্দ উদযাপনের কোনো সুযোগ নেই। আমার দায়িত্ব শুধু তাদের সেবা করে যাওয়া। এ জন্য তিনি তার সমর্থক ও ভোটারদের কোনো ধরনের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়ে সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান আর নারায়ণগঞ্জের সমস্যা চিহ্নিত করার নির্দেশনা দেন।
বিজয়ের পর গতকাল বিকেলে ডা. আইভী তার বাবার কবর জিয়ারত করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি সর্বস্তরের নেতাকর্মী, মিডিয়া ও বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

No comments

Powered by Blogger.