বিদেশি এয়ারলাইনসের দেখা নেই ওসমানী বিমানবন্দরে-ঝুলে আছে রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন by আহমেদ নূর,

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হয়েছে আজ এক যুগ; কিন্তু আজ পর্যন্ত বিদেশি কোনো এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ এ বিমানবন্দরে নামেনি! অথচ বিমানবন্দরে রয়েছে বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ওঠানামার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের দুটো বোর্ডিং ব্রিজ, কাস্টমস চেকিং, অটো লাগেজ বেল্ট সুবিধা। কিন্তু সীমিতসংখ্যক ফ্লাইট চলাচলের কারণে এখন বোর্ডিং ব্রিজ দুটোর ব্যবহারও সীমিত হয়েপড়েছে।অন্যদিকে রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকা এবং কার্গো অবকাঠামো গড়ে না উঠায় অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ বিমানবন্দরটি বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে। অথচ রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন বিষয়টি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন।


আর কার্গো অবকাঠামো গড়ে তোলার কোনো পরিকল্পনাই এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।ওসমানী বিমানবন্দরে এখন প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ বিমানের পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের মধ্যেই এ বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক মান সীমাবদ্ধ। বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকা এবং ফ্লাইট পরিচালনায় সরকারি সিদ্ধান্তের অভাবেই বিদেশি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চলাচল করছে না বলে জানা গেছে। রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি অনেক দিন ধরে ঝুলে আছে। গত বছর ৫ অক্টোবর একনেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্পও অনুমোদন হয়। কিন্তু এক বছরেও এর নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করা হয়। প্রথম দিকে বেশ কিছু দিন লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায় নানা জটিলতার কারণে। এখন সপ্তাহে বাংলাদেশ বিমানের দুটো ফ্লাইট লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে আসে। এ ছাড়া দুবাই, আবুধাবি ও জেদ্দা থেকে সপ্তাহে একটি করে বিমানের আরো তিনটি ফ্লাইট ওসমানী বিমানবন্দরে আসে। অথচ অ্যামিরেটেস, সৌদিয়া, কাতার, এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারলাইনসের বিপুলসংখ্যক যাত্রী সিলেটে রয়েছেন। এসব যাত্রীকে নিজ নিজ এয়ারলাইনস সিলেট থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় ঢাকায় নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠায়।
জানা গেছে, বিদেশি যেসব এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বাংলাদেশি যাত্রী পরিবহন করে তার অর্ধেকই সিলেটের যাত্রী। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় অনেক ভোগান্তির মাধ্যমে তাঁদের ঢাকায় যেতে হয়।
সিলেটের বাংলাদেশ ওভারসিজ সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে বাস করেন, যার ৯৫ শতাংশই সিলেটের। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ছয় লাখ, ইতালিতে দেড় লাখ এবং কানাডায় দেড় লাখ প্রবাসী রয়েছেন, যাঁদের অর্ধেকই সিলেটের বাসিন্দা। ওভারসিজ সেন্টারের নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, এসব প্রবাসী গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে বছরে দুবার দেশে আসেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান এতসংখ্যক যাত্রীর আসন দিতে পারে না। আবার বিদেশি কোনো এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ সিলেট না আসায় প্রবাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশ বিমানের সব ফ্লাইটও সরাসরি সিলেট আসে না। তাঁর মতে, ওসমানী বিমানবন্দরে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর উড়োজাহাজ ওঠানামা করলে বিদেশি কার্গো বিমানও আসবে। এতে করে এ অঞ্চলের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুনমাত্রা যোগ হবে।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বর্তমানে ১০ হাজার ২৫০ ফুট। রানওয়ে ৭০ পিসিএন শক্তিসম্পন্ন। এ রানওয়ে ডিসি-১০ উড়োজাহাজ ওঠানামা করার মতো উপযোগী বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়। বাংলাদেশ বিমানের ডিসি-১০ উড়োজাহাজ প্রায়ই ওসমানী বিমানবন্দরে ওঠানামা করে বলে জানান বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক মো. হাফিজ আহমেদ। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশি উড়োজাহাজ না আসার পেছনে একটি বড় কারণ এখানে রিফুয়েলিং স্টেশন নেই। জ্বালানি সংগ্রহের সুবিধা না থাকার কারণে অনেক এয়ারলাইনস এ বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে অনেকে মনে করেন। ওসমানী বিমানবন্দরে অন্যান্য সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জনবল সংকট, মান্ধাতার আমলের স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার, জরাজীর্ণ নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট, রানওয়ের নিরাপত্তাহীনতা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব। বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে বিমানবন্দরে যে জনবল রয়েছে, তার দ্বিগুণ জনবল প্রয়োজন। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ফারুক আহমদ মিছবাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বলা হলেও এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে না। অথচ এ বিমানবন্দরকে ব্যবহার করে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করার সম্ভাবনা রয়েছে।'
সিলেট মেট্রোপলিটন বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'ওসমানী বিমানবন্দরকে সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক করা সময়ের দাবি; কিন্তু আমরা সে লক্ষ্যে কার্যক্রম দেখছি না। বাংলাদেশ বিমান আর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ছাড়া কোনো উড়োজাহাজ এখানে আসে না। বিমানের কার্গো চার্জও ঢাকার তুলনায় অনেক বেশি।' ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. হাফিজ আহমেদ বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওসমানী বিমানবন্দরে ওঠানামা করে। বিদেশি কোনো এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ওসমানী বিমানবন্দরে ওঠানামা করে না। তবে এখানে বিদেশি ফ্লাইট পরিচালনার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।' সীমানা প্রাচীরের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রমও চলছে।

No comments

Powered by Blogger.