উদ্যোগ-শুশুক রক্ষায় সুন্দরবনে তিনটি অভয়ারণ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত

মিঠা পানির বিপন্ন শুশুক রক্ষায় সুন্দরবনের তিনটি এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এলাকা তিনটি হলো ঢংমারী, চাঁদপাই ও দুধমুখী। বন বিভাগের কর্মকর্তারা এ কথা জানান বলে বিবিসি ও এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।বন্য প্রাণী সংরক্ষকরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের গড়ান বনভূমিই বিশ্বের একমাত্র স্থান, যেখানে গঙ্গা নদীর ডলফিন ও ইরাবতী শুশুক পাওয়া যায়। এগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্নপ্রায় স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর অন্যতম। সাধারণত জেলেরা শুশুক শিকার করেন না। তবে প্রায়ই তাঁদের জালে আটকে শুশুক মারা যায়।


এ ছাড়া পরিবেশদূষণ ও পানিতে লবণের মাত্রা বৃদ্ধিও শুশুকের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বিবিসিকে জানান, 'শুশুকের বেঁচে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলীয় ঢংমারী, চাঁদপাই ও দুধমুখী নদী চ্যানেলকে আমরা অভয়ারণ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই চ্যানেলগুলোতে বিপন্নপ্রায় শত শত শুশুকের বসবাস। ওই এলাকাগুলোতে জেলেদের মাছ ধরতে দেওয়া হবে না।' তিনি বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটির বাংলাদেশ তিমি বৈচিত্র্য প্রকল্পের (বিসিডিপি) একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার ওই ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিসিডিপির প্রতিবেদনে ওই তিনটি এলাকাকে শুশুকের বিচরণভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় শিগগিরই শুশুকের বিচরণ এলাকাগুলোতে মাছ ধরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। জেলেরা যাতে ভুল করে ঢুকে না পড়েন, সেই জন্য ওই এলাকাগুলোতে সুস্পষ্ট চিহ্ন থাকবে।
এদিকে পরিবেশবাদীরা বলেছেন, সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় বাস্তুব্যবস্থা তিমি, শুশুক ও শুশুকজাতীয় প্রাণীর বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। গাঙ্গেয় শুশুক সুন্দরবনের উজানের দিকে অবস্থান করে। অন্যদিকে ইরাবতী শুশুক অবস্থান করে সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি।
গত অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলে বিসিডিপি ৯ দিন ধরে ওই সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষকরা সুন্দরবনে ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক ও পরপয়েস শুশুকও দেখেছেন। সাধারণত এ দুই শ্রেণীর শুশুক উপকূলীয় এলাকার কাছাকাছি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে পানিতে লবণের মাত্রা বেড়ে গেলে এ শুশুকগুলো উজানের দিকে চলে আসে। লবণের মাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার সেগুলো
ভাটির দিকে চলে যায়।
বিসিডিপির মুখ্য গবেষক রুবাইয়াৎ মনসুর ওই শুশুকগুলো সম্পর্কে বলেন, 'এ বছর সমীক্ষা চালানোর সময় বৃষ্টির পরপরই যখন পানিতে লবণের মাত্রা কমে আসে তখন আমরা অনেক শুশুক দেখেছি। ওই সময়ে ওই এলাকায় তাদের উপস্থিতি হয়তো পানিতে লবণের মাত্রা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত বহন করে।' তিনি বলেন, 'আমাদের সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চল অনেক শুশুকের আবাসস্থল। এর পাশাপাশি আরো কয়েকটি এলাকাকে শুশুকের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।' তিনি সতর্ক করে বলেন, সুন্দরবনে শুশুকের নতুন বিচরণক্ষেত্র পাওয়ার অর্থ এই নয় যে স্তন্যপায়ী ওই প্রাণীর সংখ্যা সেখানে বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মিঠা পানি কমে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে শুশুকের জীবনযাপনে প্রভাব পড়ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে গবেষকরা সুন্দরবনের জলপথে এবং বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ছয় হাজার ইরাবতী শুশুক দেখতে পান। এ শুশুকগুলো শিকারি তিমি শ্রেণীর।

No comments

Powered by Blogger.