বাংলাদেশের হতাশার দিন ও ব্রাভোর সেঞ্চুরি-ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১ম ইনিংস ৩৫৫ ও ২য় ইনিংস ২০৭/৩, বাংলাদেশ : ১ম ইনিংস ২৩১ by মাসুদ পারভেজ

ব্রায়ান লারা আউট হয়ে গেলে টিভিই বন্ধ করে দিতেন ড্যারেন ব্রাভো! এমনই পাগল ভক্তের সুবাদে আরো বছর চারেক আগেই ক্যারিয়ারে ইতি টেনে ফেলা ত্রিনিদাদিয়ান প্রিন্সের ব্যাটিং তবু আজও টিভিতে দেখা যায়! হাঁটা-চলা, এমনকি ব্যাটিংয়ের ধরনও দেখতে এক হওয়ায় লারার সঙ্গে তুলনা ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই শুনে আসছেন ব্রাভো। সেই সঙ্গে সম্পর্কে লারার ভাগ্নে হওয়াটাও তাঁর ওপর চাপ বাড়াচ্ছিল ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ইনিংস না থাকায়। অবশেষে সেই চাপ জয় করা প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি এল কাল এবং সেটি করার পর দেখা গেল লাফ দিয়ে সেঞ্চুরি উদ্যাপনের ঢংও দুজনের একই! সেঞ্চুরির পর আবেগতাড়িত হয়ে মাঠে শুয়েও পড়লেন।


আনন্দাশ্রুও চোখ ভিজিয়েছে নিশ্চয়ই। একই সময় বাংলাদেশ শিবিরে হতাশার রাগিণীও কি বেজে চলেনি? ব্রাভোর সেঞ্চুরিতে তৃতীয় দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে জায়গায়, সেখান থেকে ম্যাচের গতিপথ বলতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের কোচ স্টুয়ার্ট ল শুধু বলতে পারছেন, 'সম্ভবত ম্যাচটা সে দিকেই যাচ্ছে, যে দিকে আমরা যেতে চাইনি।' আগের দিন 'মিডিওকার' ব্যাটিং পারফরম্যান্সে অবস্থা সঙ্গিন হওয়ার পর কাল খুব বেশি কিছু আশা করার ছিল না। তবুও প্রথম ইনিংসের পিছিয়ে থাকাটা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার লক্ষ্যও তৃতীয় দিনের সকালে বড় এক ধাক্কা খেল। ১৫১ রানে পিছিয়ে থেকে শুরু করে ২৩১ রানে অলআউট বাংলাদেশ যোগ করতে পারল আর মাত্র ২৭ রান।
১২৪ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ক্যারিবীয়রাও ধাক্কা খেয়েছিল শুরুতে। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই স্কয়ার লেগ থেকে নাঈম ইসলামের সরাসরি থ্রোতে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের রানআউটে শুরুর পর প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল আরো। তারপর সাকিব আল হাসানের বলে অযথাই তুলে মারতে গিয়ে ওয়েস্টইন্ডিজকে ৩৩ রানে ২ উইকেট হারানো দলে পরিণত করে যান প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান কিয়েরন পাওয়েল। কিন্তু মিড অনে নাসির হোসেনের নেওয়া ক্যাচটা দিনের শেষে নেভার আগে ধপ করে জ্বলে ওঠা প্রদীপই হয়ে থাকছে! ব্রাভো আর প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান কার্ক এডওয়ার্ডসের ব্যাটে চড়ে ক্যারিবীয়দের বড় লিডের পথে যাত্রার সূচনা সেখান থেকেই। দিনশেষে যে লিড হয়ে গেছে ৩৩১ রানের!
যদিও দেশের মাঠেই ৫২১ রানের টার্গেটের পেছনে ছুটে বাংলাদেশের ৪১৩ রান করার নজির আছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওরকম ব্যাটিং অবশ্য ব্যতিক্রমের পর্যায়েই পড়ে। এবার প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ে সেরকম ব্যতিক্রমী কিছু করে দেখানোর আশাও কেউ করছেন বলে মনে হয় না। অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের জন্য হতাশার দিনেও ব্যতিক্রম আছে একটা। সেটা রুবেল হোসেনের বোলিং। তাঁর কথা আলাদা করে বললেন সেঞ্চুরিয়ান ড্যারেন ব্রাভোও, 'রুবেল দারুণ বোলিং করে গেছে। কিন্তু ওর দুর্ভাগ্য যে কোনো সাফল্য পেল না।' বিশেষ করে চা বিরতির পর ব্রাভো-এডওয়ার্ডসদেরও ভুগিয়েছেন এ পেসার।
কিন্তু বাংলাদেশ যাঁদের ওপর ভরসা করে থাকে, সেই স্পিনাররাই হয়ে থাকলেন হতাশার কারণ। উইকেট থেকে কোনো সাহায্য না পাওয়ায় তাঁরাও নির্বিষ হয়ে গেলেন! প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া সাকিবও তুলনায় অনেকটা ম্রিয়মাণ। সেই সঙ্গে আরো কিছু গোলমাল, বিশেষ করে ক্যাচ ফেলার মাশুল দিয়ে আরো বড় সংগ্রহ এবং লিডের পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এগিয়ে দেওয়া। ব্রাভোর কথাই ধরুন না। দু-দুবার তাঁকে জীবন না দিলে তো দিনের শেষে তাঁর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির আনন্দও দেখতে হয় না। দুবারই ক্যাচ পড়ার সময় তিনি ৪৫ রানে দাঁড়িয়ে। এবং দুটো ঘটনাই সাকিবের একই ওভারে। প্রথমবার ব্রাভোর ব্যাটের কানা নিয়ে যাওয়া বল গ্লাভসে রাখতে পারেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এক বল পরই স্লিপে সেই ব্রাভোরই ক্যাচ ফেলেছেন ইমরুল কায়েস।
এমন সুযোগ হেলায় হারানোর লোক নন ব্রাভো। কার্ক এডওয়ার্ডসকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে জুড়েছেন ১৫১ রান। এক টেস্টের দুই ইনিংসেই কারো সেঞ্চুরি করার ৬৯তম নজির স্থাপনের খুব কাছে চলে গিয়েও তা করা হয়নি এডওয়ার্ডসের (৮৬)। সোহরাওয়ার্দী শুভর বলে ফ্লিক করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। আর দুবার জীবন পাওয়া ব্রাভো (১০০*) শুভর করা দিনের শেষ বলে দুই রান নিয়েই পেঁৗছে যান সেঞ্চুরিতে এবং লারার ঢংয়ে সেঞ্চুরি উদ্যাপন দেখা গেল টিভিতেও।
লারা আউট হয়ে গেলে টিভি বন্ধ করে দিতেন। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি দিয়ে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার পথও কি বন্ধ করে দিলেন না ব্রাভো!

No comments

Powered by Blogger.