কী জাদু আইভীর

লের প্রকাশ্য সমর্থন না পেয়েও লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে দলের সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। একই সঙ্গে সারা দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে তিনিই একমাত্র নারী মেয়র। কী এমন জাদুতে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আবিষ্ট করে ফেললেন আইভী?নির্বাচনী খবরাখবর সংগ্রহের কাজে কিছু দিন ধরে নারায়ণগঞ্জে অবস্থানকালে জানা গেছে আইভী-জাদুর রহস্য। বাবা আলী আহম্মদ চুনকা ছিলেন জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা। তিনিও ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বাবার সুনামকে তিনি ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।


বাবার মতোই সব সময় পাশে থেকেছেন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের। সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকেছেন। রিকশাওয়ালাদের কাছে যেমন তিনি জনপ্রিয়, তেমনি মুটে-মজুর বা শিক্ষিত ব্যক্তিদের কাছেও তাঁর সমান গ্রহণযোগ্যতা।
দীর্ঘ আট বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালে আইভী নারায়ণগঞ্জের চেহারায়ও অনেক পরিবর্তন এনেছেন। শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি তিনিই বানিয়েছেন। প্রধান সড়কটিও তিনিই তৈরি করেছেন। ব্রিটিশ আমলের এই ঘিঞ্জি শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ছাপও তিনিই প্রথম ফেলেছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো দুর্নীতিতেও জড়িয়ে পড়েননি। সব দল-মতের লোককে তিনি দেখেছেন সমান চোখে। সব দলের মানুষের কাছেই আইভী নিজেকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। নারীদের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ নজর। নারী ভোটাররা তাঁকে পেয়ে খুশি হয়েছেন। নারী ভোটাররা তাঁর জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কখনোই ওঠেনি সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-নির্যাতনের অভিযোগ।
অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থী সরকার সমর্থিত এ কে এম শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অনেক দিন থেকেই রয়েছে গডফাদারের তকমা। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধেও। এসব বিষয়কে কখনোই সাধারণ মানুষ ভালোভাবে দেখেনি। তারা ঝুঁকেছে আইভীর দিকে।
আর শেষ মুহূর্তে বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় লাভ হয়েছে আইভীর। নিজের কয়েকজন আত্মীয়স্বজনও স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অ্যাডভোকেট তৈমূরের সঙ্গে আইভীর বাবারও গভীর বন্ধুত্ব ছিল। আইভীও অনেক শ্রদ্ধা করেন তৈমূরকে। বিএনপির ভোটারদের একটি বিরাট অংশ নিজেদের প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় আইভীকে বেছে নিয়েছেন। বিএনপির একটি অংশ আগে থেকেই তাঁর পক্ষে কাজ করছিল। আওয়ামী লীগেরও একটি বড় অংশ ছিল তাঁর সঙ্গে। প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও সক্রিয় সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন সময়ে ভোটাররা শুনেছেন আইভীর সাবলীল কথাবার্তা। তিনি কাউকে অযথা কষ্ট দিয়ে তেমন কোনো কথা বলেন না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা বিরোধীদের সম্পর্কেও তিনি কখনো বিষোদগার করেন না। এসব কারণেও আইভীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন সাধারণ ভোটাররা।
সর্বোপরি মিডিয়ার পক্ষ থেকেও আইভী ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ থাকায় মিডিয়া তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারেনি। এদিক থেকে বলা যায়, প্রায় সব সহযোগিতা পেয়েছেন আইভী। মিডিয়া জনমত তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে, সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব ফেলেছে।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করেছে, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের বিকল্প তৈমূর আলম খন্দকার হতে পারে না। শামীম ওসমান পরিবারের একচেটিয়া আধিপত্যকেও তারা ভালোভাবে নিতে পারছিল না। তারা আইভীকে বেছে নিয়েছে। সর্বোপরি ক্লিন ইমেজ আইভীর জয়ের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে।

No comments

Powered by Blogger.