ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিলেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা-শেয়ারবাজারে দরপতন

শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। এ সময়ের মধ্যে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসি কার্যালয় ঘেরাও এবং বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির নেপথ্যের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করারওহুমকি দিয়েছে। শেয়ারবাজারের দরপতন অব্যাহত থাকার
প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বিনিয়োগকারীদের এ সংগঠন গতকাল সোমবার ডাকা সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেয়।


দরপতন ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে বিনিয়োগে ফিরিয়ে আনাসহ নয় দফা দাবিও পেশ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। পরে ডিএসইর সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।
এদিকে চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনেও দরপতন অব্যাহত ছিল। গতকাল ডিএসইর সাধারণ সূচক কমেছে ৪০ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া ২৪৯টি কোম্পানির শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজের মধ্যে ৭৫টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৩টির দর। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমলেও ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধি গতকালের শেয়ারবাজারকে বড় দরপতনের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। গতকালের দরপতনসহ এ নিয়ে টানা চার দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৫১৯ পয়েন্ট।
সংবাদ সম্মেলন :আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হলে ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। মতিঝিলের নিজস্ব কার্যালয়ে দুপুর পৌনে ১টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী। চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচির বাইরে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে এ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত উল্লাহ ফিরোজ প্রমুখ।
বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিনিয়োগকারীরা নয় দফা দাবি পেশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী আজ থেকে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কেউ এ বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অপসারণ করা। মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানিগুলোকে আইনি সীমার সর্বোচ্চ পর্যন্ত বিনিয়োগে বাধ্য করা। মিউচুয়াল ফান্ডের মূলধনের ৮০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগে বাধ্য করা। কোম্পানি আইন সংশোধন করে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ শেয়ার বাধ্যতামূলক সংরক্ষণ করা। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে এনবিআর ও দুদকের অনাপত্তি পত্র বা প্রজ্ঞাপন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জারি করা।
বিক্ষোভ :সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুর দেড়টায় দরপতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেন বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, শেয়ারবাজারের দরপতন বন্ধ করা না হলে, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি কেবল মতিঝিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ঢাকার অন্যান্য সড়কে, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ প্রধান বিভাগীয় শহরেও ছড়িয়ে যাবে বলে হুমকি দেন তারা।
রাস্তা অবরোধ করে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি করলে গতকালও মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত রাস্তায় দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের অপর সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস ফোরাম বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এসইসির কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর দিলকুশাস্থ এসইসি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে তারা।
বাজার পরিস্থিতি : গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও দরপতন দিয়ে দেশের উভয় শেয়ারবাজারের লেনদেন শুরু হয়। লেনদেন শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে প্রায় সব শেয়ারের দর কমলে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমে যায় ৩৬ পয়েন্ট। তবে এ সময়ে দেশে পরিচালিত কয়েকটি বহুজাতিক বাণিজ্যিক ব্যাংক উল্লেখযোগ্য শেয়ার ক্রয় করলে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে এর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে সূচক বেড়ে যায় প্রায় ৮০ পয়েন্ট। এমনকি দুপুর ১২টায় সূচকটি গতকালের সর্বোচ্চ ৫১৪৯ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়, যা আগের অবস্থান থেকে ৭২ পয়েন্ট বেশি। তবে পরের পৌনে তিন ঘণ্টায় বাজার ক্রমাগত নিম্নমুখী ছিল। কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক শেয়ার ক্রয় অব্যাহত রাখলে বড় কোনো দরপতন ছাড়া গতকালের লেনদেন শেষ হয়। এমনকি ডিএসইর সাধারণ সূচক শেষ পর্যন্ত ৫০০০ পয়েন্টের মাইলফলক থেকেও ছিটকে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। শেয়ারবাজার সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক পরিমাণে কম হলেও নতুন করে বিনিয়োগে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। গতকালের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগের বেশির ভাগই ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোতে হয়েছে বলে জানা গেছে। বড় মূলধনী কোম্পানির এই খাতের প্রায় সব শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে সূচকের বড় দরপতন হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.