ট্রাইব্যুনালে দাখিল আজ-গোলাম আযমসহ ৫ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে 'চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন' প্রস্তুত করেছে তদন্ত সংস্থা। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় প্রসিকিউশনের মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত ওই 'চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন' আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।


পৃথক পাঁচ চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গোলাম আযমসহ জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ
নেতার বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত এবং সাক্ষীদের বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালের হেফাজতে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কারাবন্দি জামায়াত নেতা নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার বিরুদ্ধেও বিচার শুরু করতে সুপারিশ করা হয়েছে। অন্য মামলায় কারাবন্দি জামায়াতের চার নেতাকে গত বছরের ২ আগস্ট যুদ্ধাপরাধ
মামলায় ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে আটক দেখানো হয়। বর্তমানে গোলাম আযম ছাড়া অন্য চার নেতা কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, গোলাম আযমকে বাদ দিয়ে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ বাকি চারজনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। কেননা স্বাধীনতা যুদ্ধে শীর্ষ এ নেতাদের নির্দেশনা, সমর্থন, প্ররোচনায় পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তিবাহিনী গঠন করে মুক্তিকামী বাঙালি নিধনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করা হয়েছিল।
তিনি জানান, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গত বছরের ১ আগস্ট তদন্ত শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ না থাকলেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন মঙ্গলবার জমা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে গোলাম আযমকে গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আবদুল হান্নান খান আরও বলেন, পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার পৃষ্ঠার তথ্য-প্রমাণ পৃথক চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে দাখিল করা হচ্ছে। এর মধ্যে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৩৬০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সাক্ষী ৪০ জন। এ ছাড়া নিজামীর বিরুদ্ধে ৪১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৪০ জন, মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৩৬৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৪৫ জন, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৩২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩৭ জন এবং কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৩৮৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ২৫ জন সাক্ষীর তালিকা দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা সাক্ষী ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে মামলার গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্তকারী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে সারাদেশে যত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার সব দায় জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের। তার সম্পৃক্ততায় স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি গণহত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, পিস কমিটি (শান্তি কমিটি), পাইওনিয়ার ফোর্সসহ সহায়ক অন্যান্য বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। সে সময় গোলাম আযম ছিলেন পিস কমিটির কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির।
নিজামী, মুজাহিদসহ জামায়াতের অন্য চার নেতার বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক খান সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর ১ আগস্ট থেকে জামায়াতের এ চার নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পর তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী এবং আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.