এসেছে সেই শিশু-৭০০ কোটিতম মানবের আগমন দাবি করছে বাংলাদেশও

পৃথিবী নামক গ্রহটির জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে দাঁড়াল। এটা জাতিসংঘের হিসাব। বিশ্বের যেকোনো দেশে ৩১ অক্টোবর ৭০০ কোটিতম শিশুর জন্ম হতে যাচ্ছে_বেশ কয়েক দিন আগেই এ ঘোষণা দিয়েছিল জাতিসংঘ। অতঃপর শুরু হয় সেই শিশুর পৃথিবীতে আগমন প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রহর গণনা। অনেকেই গুনেছেনসেইপ্রতীক্ষারপ্রহর।মিডিয়াও চোখ মেলে ছিল, কান পেতে ছিল। অবশেষে পৃথিবীতে এসেছে সেই শিশু। বাংলাদেশও সেই ৭০০ কোটিতম শিশুর দাবিদার। সূত্র : এএফপি, বিবিসি নিউজ, টেলিগ্রাফ (ইউকে) অনলাইন।


৭০০ কোটিতম শিশুটিকে শনাক্ত করা কি এতই সহজ! বিশ্বে কত শিশুই তো জন্ম নিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। কারো খবর মেলে, কারোটা মেলে না। তাই বিষয়টিকে প্রতীকী হিসেবে ধরে নেওয়াই ভালো। কারণ পরিসংখ্যানিক ভুলের ব্যাপারটিকেও তো হিসাবে নিতে হবে। বিভিন্ন দেশে ৭০০ কোটিতম শিশুর জন্মের ক্ষণটিকে উপলক্ষ করে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ উপলক্ষে জাম্বিয়ায় আয়োজন করা হয় গানের প্রতিযোগিতা। ভিয়েতনামে 'সেভেন বি : কাউন্টিং অন ইচ আদার' নামের কনসার্ট আয়োজন করা হয়। রাশিয়া নির্বাচিত কিছু সদ্যোজাতকে উপহার দেওয়ার আয়োজন করে। আইভরি কোস্ট আয়োজন করে কমেডি শোয়ের।
সর্বশেষ তথ্যমতে, ফিলিপাইন '৭০০ কোটিতম শিশু'র জন্মের ক্ষণটি ঘটা করে পালন করেছে। রবিবার মধ্যরাতে (৩১ অক্টোবর) দানিকা মে কামাচো নামের শিশুটির জন্ম হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকে যখন স্বজনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল, সেই মুহূর্তে চারদিক থেকে জ্বলে ওঠে ক্যামেরার ফ্লাশলাইট। রাজধানী ম্যানিলার হোসে ফাবেলা মেমোরিয়াল হাসপাতালে জন্ম নেওয়া শিশুটির ওজন সাড়ে পাঁচ পাউন্ড। শিশুটির আপ্লুত মা তাঁর অনুভূতি বর্ণনা করে বলেন, 'আমার মেয়ে পৃথিবীর ৭০০ কোটিতম শিশু_এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না!'
জন্মের পরই দানিকা মে কামাচো ও তার গর্বিত বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে যান জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। তাঁরা কেক কেটে শিশুটির জন্মক্ষণ উদ্যাপন করেন। শিশুটির জন্য উপহারসামগ্রীর পাশাপাশি তার জন্য স্কলারশিপের ঘোষণাও দেওয়া হয়। উপহারের ডালা সাজিয়ে তাকে এই পৃথিবীর আলো-বাতাসে অভিষিক্ত করে তার স্বদেশবাসীও।
আরো ৭০০ কোটিতম শিশু
এদিকে কন্যাশিশু বা ভ্রূণ হত্যা বন্ধের বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এই পৃথিবীর ৭০০ কোটিতম বাসিন্দার জন্মভূমি হিসেবে গণনায় এসেছে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, মালদ্বীপ ও লাওসের নামও। এসব দেশে নিজেদের মতো করে ৭০০ কোটিতম শিশু জন্মের ক্ষণটিকে চিহ্নিত করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানী ঢাকার আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে রবিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে জন্মগ্রহণ করে একটি কন্যাশিশু। পৌনে তিন কেজি ওজনের ফুটফুটে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ঐশী। তার বাবা মোহসীন হোসেন চেয়েছিলেন একটি পুত্রসন্তান। কেননা তাঁর আগের দুই সন্তানও কন্যা। তবে তৃতীয় সন্তানটি কন্যা হলেও তিনি অখুশি নন। বিশেষ করে শিশুটি এমন একটি ক্ষণে জন্ম নিয়েছে যা রীতিমতো ইতিহাস হয়ে গেছে। মোহসীন বলেন, '৭০০ কোটিতম শিশুর বাবা হতে পেরে আমি যারপরনাই গর্বিত ও আনন্দিত।'
ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে ৭০০ কোটিতম শিশু হিসেবে। আন্তর্জাতিক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এই শিশুকে শনাক্ত করে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই সংস্থাটি বলছে, এই নবজাতক শুধু ৭০০ কোটিতম অধিবাসীর মাইলফলকই নয়, প্রতিটি কন্যাশিশুর বেঁচে থাকার অধিকারেরও প্রতীক।
শিশুটির নাম রাখা হয়েছে নার্গিস। ভারতের স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্নৌ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে মাল গ্রামের একটি সরকারি হাসপাতালে জন্ম তার। তার মায়ের নাম বিনীতা, বাবার নাম অজয় কুমার। বাবা সামান্য কৃষক। ছোট্ট ওই হাসপাতালে তার জন্মের ক্ষণটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়।
৭০০ কোটিতম অধিবাসীকে শনাক্ত করতে মাল গ্রামে ১০ জন প্রসবিনীকে বেছে নেয় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, যারা ৩১ অক্টোবর সন্তান প্রসব করেন। এর মধ্য থেকেই ৭০০ কোটিতম শিশু হিসেবে নার্গিসকে চিহ্নিত করা হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, '৭০০ কোটিতম শিশুর জন্ম কেবল আনন্দ উদ্যাপনের পরিসংখ্যান নয়; গভীর উদ্বেগের বিষয়ও। শিশুটির জন্ম তখনই আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে, যখন জনসংখ্যা জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।'
ধরণী কি বইতে পারবে এত চাপ
৭০০ কোটিতম শিশুর জন্ম নিয়ে বিশ্বজুড়ে এই উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি আশঙ্কাও কম নয়। আশঙ্কা এ কারণে যে পৃথিবী নামক গ্রহটি জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এই চাপ নিতে কতটা সক্ষম! জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সদ্যোজাত ৭০০ কোটিতম শিশুকে কেবল সাদরে জড়িয়ে ধরার বিষয় হিসেবে দেখছেন না। তিনি বলেন, ৭০০ কোটিতম শিশুটি এমন এক বিশ্বে প্রবেশ করছে, যেখানে রয়েছে প্রবল বৈপরীত্য। বিশেষ করে শিশুটি যদি বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলে জন্ম নেয়।
টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বান কি মুন বলেন, বিশ্বে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকা সত্ত্বেও এখনো প্রতি রাতে ১০০ কোটি লোক রাতে না খেয়ে থাকে। অনেক লোক বিলাসবহুল জীবন যাপন করলেও অসংখ্য মানুষ এখনো ভীষণ গরিব। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটি সংখ্যার নয়, মানুষের গল্প। ৭০০ কোটি লোকের যথেষ্ট খাদ্যের প্রয়োজন। তাদের পর্যাপ্ত জ্বালানি লাগবে। সুন্দর জীবনের জন্য তাদের শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ দিতে হবে। তাদের দিতে হবে কথা বলার স্বাধীনতাও।

No comments

Powered by Blogger.