দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভরা 'মুক্ত' লিবিয়া

মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের আনন্দ লিবিয়ার সবখানে সমানভাবে ছড়ায়নি। একসময়ের লৌহমানবকে এখনো ভুলতে পারেনি তাঁর সমর্থকরা। লিবিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে এখন বিদ্রোহীদের তেরঙা পতাকা উড়ছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের (এনটিসি) সমর্থকরা বলছেন, এখনো অনেক বাড়ির ভেতরেই গাদ্দাফির ছবি শোভা পাচ্ছে। গাদ্দাফির জন্য সমর্থকদের আবেগ লিবিয়ার পুনর্গঠনের পথে এনটিসির জন্য সংকট তৈরি করতে পারে বলেও ধারণা করছেন তাঁরা।গাদ্দাফির মরদেহ মরুভূমির অজ্ঞাত স্থানে দাফনের পর থেকেই বনি ওয়ালিদে তাঁর সমর্থকরা নীরবে শোক পালন করছে।


গাদ্দাফির ধরা পড়ার কয়েক দিন আগ পর্যন্তও শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল তারা। তাদের দৃষ্টিতে বিনা প্রতিরোধে শহরের দখল ছেড়ে দেওয়া লজ্জজনক হতো। বনি ওয়ালিদের শিক্ষার্থী ফাতাল্লাহ হাসান (২২) বলেন, 'আমার খুবই খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে বাবাকে হারিয়েছি। গাদ্দাফি সৎ ও দেশপ্রেমী ছিলেন, ভালো মানুষ ছিলেন_এমন মৃত্যু তাঁর কাম্য ছিল না।'
গাদ্দাফিকে যারা মানুষরূপী রাক্ষস মনে করত, তাদের অনেকেই এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। তবে গাদ্দাফির সমর্থকরা যেকোনো মুহূর্তে তাদের জন্য ভয়ংকর সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে_এনটিসি সরকার এটাও জানে। নেতার মৃত্যুর পরপরই হয়তো গাদ্দাফির সমর্থকরা জোটবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তি পাবে না। নেতৃত্বহীন অবস্থায় এবং গরম মাথায় জঙ্গি তৎপরতা চালানোর ঝুঁকি হয়তো তারা নেবে না। কিন্তু হাতে অস্ত্র থাকায় ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন হামলার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। নতুন লিবিয়ায় গাদ্দাফি সমর্থকদেরও জায়গা হবে_এমনটা বোঝানোর মাধ্যমেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বনি ওয়ালিদে গাদ্দাফির সমর্থকদের মন জয়ের চেষ্টা এখনো অনেক দূরের ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিদ্রোহী ও তাদের সমর্থকরা শহরে ব্যাপক লুটপাট চালাচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, এখন পর্যন্ত কয়েক শ গাড়ি চুরি হয়েছে। গাড়ি চুরির সময় সেগুলোতে ফ্রিজ, টেলিভিশনসহ অন্য আসবাব ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফারাজ সালাহ (৪৪) নামের এক মেকানিক বলেন, 'আমার আশঙ্কা, ঘরে ফিরে এ পরিস্থিতি দেখে লোকজন বিদ্রোহীদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইবে। এখানে কোনো নিরাপত্তাই নেই এবং ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।'
তবে গাদ্দাফির পতনের পরপরই তাঁর সমর্থকদের দল পাল্টানোর মতো ঘটনাও শোনা যাচ্ছে। বনি ওয়ালিদের কাছের শহর তারহৌনার ফাতহি মোফতাহ নামের এক বিদ্রোহী জানান, গণ-আন্দোলন শুরুর পর থেকেই তাঁর শহরের বেশির ভাগ মানুষ গাদ্দাফির অনুগত ছিল। কিন্তু গত ২০ আগস্ট বিদ্রোহীরা শহরে ঢোকার পরই পরিস্থিতি পাল্টে গেল। আগে যাদের 'ইঁদুর' বলে সম্বোধন করত, সেই বিদ্রোহীদের সঙ্গেই এখন কাঁধ মিলিয়ে চলতে শুরু করেছে তারা। গত আগস্টে ত্রিপোলির পতনের পরপরই গাদ্দাফি সরকারের অনুগত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিষয়-সম্পত্তি ছেড়ে পালাতে শুরু করে। যারা থেকে যায়, তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়।
বনি ওয়ালিদের বিমানঘাঁটিতে স্থাপন করা এনটিসি সদর দপ্তরের কমান্ডার মুবারক আলি বলেন, 'বন্দিদের বেশির ভাগই শাস্তির ভয় পাচ্ছে। গাদ্দাফি জিতলে তারা হয়তো এমনটাই করত। কিন্তু তাদের ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা এটা বোঝাতে চাই যে এ বিপ্লব লিবিয়ার সব মানুষের।' সূত্র : টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.