এবার চামড়ার দর নির্ধারণ হয়নি by শেখ আবদুল্লাহ

প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করা হলেও এ বছর চামড়া ব্যবসায়ীরা দর নির্ধারণ করছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চামড়া কিনবেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নেতারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন কাঁচা চামড়ার দাম ওঠানামা করছে। বিশেষ করে আমেরিকার বাজারে চামড়ার দাম কমছে ব্যাপকভাবে। এজন্য চামড়ার আগাম দাম নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।


উল্লেখ্য, গত বছর ঢাকাতে কোরবানির গরুর চামড়ার দর নির্ধারিত হয়েছিল প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা। এ বছর গরুর চামড়ার দাম গতবছরের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা বা তার বেশি কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কোহিনূর ট্যানারিজ লিমিটেডের মালিক শাহীন আহমেদ সমকালকে বলেন, এ বছর আমরা কোনো দর নির্ধারণ করব না। বাজারে যে দর আছে সেই দরেই চামড়া বিক্রি হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন চামড়ার দাম ওঠানামা করছে। এ কারণে আগাম দর নির্ধারণ সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে চামড়ার সরবরাহ বেড়েছে। গত বছর অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে গরুর মাংস খাওয়া কমে যাওয়ায় চামড়ার সরবরাহ কমে যায়। এছাড়া গরু কোরবানিও কম হয়। ফলে গত বছর চামড়ার সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু গত রমজানের সময় থেকে দেশে চামড়ার সরবরাহ বেড়েছে। মাছ, অন্যান্য মাংস এবং শাকসবজির দাম বাড়ায় গরুর মাংসের চাহিদা বেড়েছে। এতে চামড়ার সরবরাহ বেড়েছে। বর্তমানে দেশের ট্যানারি কারখানাগুলোতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ পিস চামড়া মজুদ রয়েছে। এছাড়া গত দুই মাস ধরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানিও কমেছে। কমেছে অর্ডারও। ফলে চামড়ার সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম। এ জন্য দেশের বাজারেও চামড়ার দাম কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত চামড়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি বর্গফুট প্রায় ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশে চামড়া শিল্পের সারা বছরের চাহিদার অর্ধেক চামড়া এই কোরবানির সময় সংগ্রহ করা হয়। ফলে এই কোরবানির সময়ের চামড়ার দরের ওপর নির্ভর করে দেশের চামড়া শিল্পের কার্যক্রম। চামড়ার দর কমে গেলে তা পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের আশঙ্কা থাকে। কারণ বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে সবসময়ই চামড়ার দর বেশি। এছাড়া কোরবানির চামড়ার দরের সঙ্গে দেশের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী, মাদ্রাসা ও মসজিদের আর্থিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। কারণ কোরবানির পশুর চামড়া সব অর্থই দরিদ্রদের দান এবং মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। অর্থাৎ কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বাড়লে দরিদ্র শ্রেণী ও এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন হয়। দেশের সিংহভাগ কোরবানির পশু গরু। এর পরের অবস্থান ছাগলের। এজন্য কোরবানির সময় এ দুটি পশুর চামড়ার ব্যাপক সমাগম হয়। এছাড়া মহিষ, উট, দুম্বা ও ভেড়া কোরবানি হয়ে থাকে। ধারণা করা হয়, প্রতিবছর কোরবানিতে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য পশুর প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা।

No comments

Powered by Blogger.