বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির নামে গলাকাটা ফি by বদরুদ্দোজা সুমন

বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতানোর তোড়জোড় চলছে। নিয়মনীতি না থাকায় বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ যে যার ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক হাঁকছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছর 'বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১' নামে যে সংশোধিত নিয়মনীতি প্রণয়ন করেছে তাতে ভর্তি ফি নির্ধারণ সংক্রান্ত নির্দেশনা নেই। ফলে বেসরকারি কলেজগুলো গলাকাটা ফি নির্ধারণ করে ভর্তিচ্ছুদের পকেট কাটার সব আয়োজন চূড়ান্ত করেছে।


এদিকে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির শেষ তারিখ (৩১ অক্টোবর) অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আবেদনের শেষ তারিখ নির্ধারণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এটি শিক্ষার্থীদের চাপে ফেলে বেশি টাকা আদায়ের অপকৌশল।
বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, কলেজভেদে শিক্ষার্থীপ্রতি ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভর্তি ফি চাওয়া হচ্ছে। তার ওপর ভ্যাট, হোস্টেলে সিট ভাড়া, মাসিক বেতন_ এসব তো রয়েছেই। কোনো কোনো কলেজে সেশন ফির নামেও মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়। রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজে
১৬ লাখ ৭২ হাজার, হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজে ১৫ লাখ, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ ছয় হাজার, এনাম মেডিকেল কলেজে ১৪ লাখ, নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে সাড়ে ১২ লাখ, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজে ১১ লাখ ৯৮ হাজার, উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ ২৫ হাজার, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ১৪ লাখ, কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ১১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ভর্তি ফি নির্ধারণের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, কলেজগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দালালচক্র বিনা রসিদে কয়েক লাখ টাকা (হিডেন চার্জ) বাড়তি আদায় করে। এই টাকার ভাগ কলেজ কর্তৃপক্ষও পায়। অবশ্য ঢাকার বাইরে অবস্থিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি ফি তুলনামূলক কম।
অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় বিষয়ে জেড এইচ শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবু শামীম সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ানোর উন্নত মান, বিশাল ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক ল্যাব ও আবাসন সুবিধা অনুপাতে ফি নির্ধারণ করতে হয়। তবে আমাদের এখানে কোনো 'হিডেন চার্জ' নেই।
একাধিক ভর্তিচ্ছুর অভিভাবক জানান, এককালীন এতগুলো টাকা জোগাড় করতে তাদের গলদঘর্ম অবস্থা। কিস্তিতে ফি পরিশোধের সুযোগ নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ একটু মানবিক হলে অভিভাবকদের পক্ষে অর্থ পরিশোধ করা সহজ হতো।

প্রাইভেট মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন সমকালকে বলেন, বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার খরচ একটু বেশি। এ ক্ষেত্রে আসলে কিছু করার নেই। ব্যয় এত বেশি যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কম টাকা নিলে মান বজায় রাখা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে অনুমোদিত ৪৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ১৩টি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে। অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. শাহ আবদুল লতিফ সমকালকে বলেন, বেসরকারি কলেজগুলোর ভর্তির আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ এত কম দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তারা আরেকটু ধীরে-সুস্থে কাজটি করতে পারত।
জানা গেছে, ভর্তি ফির ওপর শিক্ষার্থীদের সাড়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। প্রতিমাসে বেতন কলেজভেদে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত, আবাসন ফি বাবদ দিতে হবে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেলে পড়াতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়।
সরকার একাধিকবার ফি নির্ধারণের পদক্ষেপ নিলেও উদ্যোক্তাদের বাধায় সেটি সম্ভব হয়নি। অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ফি নির্ধারণ করতে চাইলে কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় মালিকরা, যা অনৈতিক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সিফায়েত উল্লাহ সমকালকে বলেন, ফি নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়টি খুব দুঃখজনক। মানবিক হতে বারবার তাগাদা দিলেও উদ্যোক্তারা তা মানছেন না। এ ধরনের মানসিকতা ক্ষতিকর।

No comments

Powered by Blogger.