চরাচর-হারিয়ে যাচ্ছে পুতুলনাচ by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

পুতুলনাচ আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। বাংলাদেশের পুতুলনাচের খ্যাতি রয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। তবে গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম পুতুলনাচের প্রচলন ঘটে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।


জেলার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বিপিন পাল পুতুলনাচের প্রচলন ঘটান। একই গ্রামের গিরীশ আচার্য পুতুলনাচ দেখিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে পুতুলনাচে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মেড্ডার ধন মিয়া। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে শামীম মিয়া তা ধরে রেখেছেন। ধন মিয়ার দলের রয়েল বীণা পুতুলনাচ এখনো জনপ্রিয়। পুতুলনাচের শিল্পী মরহুম ধন মিয়া রাশিয়ায় পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর পুতুলনাচ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও দেখা যায়। এ ছাড়া খেলু মিয়া, সিদ্দিক মিয়া, কালু মিয়া, খুরশিদ মিয়া, মো. রাজ হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুলনাচের ঐতিহ্যকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করেছেন। বর্তমানে সুমি বীণা পুতুলনাচ, ঝুমুর পুতুলনাচের দুটি দল বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে পুতুলনাচের কাহিনী রচনা হয়। বর্তমান সময়ে হওয়া পুতুলনাচে বাল্যবিবাহের কুফল, বৃক্ষের উপকারিতা সম্পর্কে নানাভাবে বোঝানো হয়। আখাউড়া বড়বাজারে চলতে থাকা বৈশাখী মেলায় বসেছে পুতুলনাচের আসর। প্রতিদিনই পুতুলনাচ দেখতে ভিড় করছে বিনোদনপ্রেমীরা। পুতুলনাচের একটি আসরে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার হওয়া যে অপরাধ, সেটিও বোঝানো হচ্ছে। এ ছাড়া কুমিরের ভয় উপেক্ষা করে জেলের মাছ শিকার, হনুমানের বাঁদরামি দেখানো হচ্ছে। ফাঁকে ফাঁকে চলছে পুতুলনাচের সঙ্গে বাউলগানসহ বিভিন্ন গান। সম্প্রতি কথা হয় পুতুলনাচ শিল্পী শামীম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে পুতুলনাচের মধ্যেও অশ্লীলতা ঢুকে গেছে। অনেকে পুতুলনাচের কথা বলে নাচ-গানের আয়োজন করে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালায়, যা প্রতিহত করা খুব জরুরি। পুতলনাচের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.