ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা-অর্থনীতির স্বার্থই মুখ্য হোক

হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনীতির ক্ষতি তুলে ধরতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠকের যে উদ্যোগ এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ নিয়েছেন তাকে সব মহল স্বাগত জানাবে এটাই প্রত্যাশা। বস্তুত উৎপাদন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও গতি বিঘ্নকারী এই কর্মসূচি অনেক আগেই তার আবেদন হারিয়ে ফেলেছে।


সন্দেহ নেই_ আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ পথে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু এখন এই কর্মসূচি জনসাধারণের কাছে আতঙ্কেরই নামান্তর। কেবল ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ নন, সাধারণ মানুষও ধ্বংসাত্মক এই কর্মসূচি চায় না। হরতালের ব্যাপারে জনমত জরিপ কিংবা গণভোট পরিচালনা করলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক এ ধরনের সর্বনাশা কর্মসূচির বিপক্ষেই অবস্থান নেবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আমরা নিশ্চয়ই স্বীকার করি। কিন্তু গোষ্ঠী বা দলবিশেষের কর্মসূচি যখন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়; তা অধিকার সুরক্ষার বদলে অন্যের অধিকার হরণ করে নেয়। আমরা মুক্তকণ্ঠে বলতে চাই, ঔপনিবেশিক ও স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বহু ব্যবহারে ভোঁতা এই কর্মসূচি গণতান্ত্রিক শাসনামলে চলতে পারে না। একুশ শতকের বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন হরতাল স্বপ্ন ও সম্ভাবনার পথে প্রতিবন্ধক ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা আশা করি, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থেই ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দেবে। সবাই আন্তরিক হলে সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে আইন করা কঠিন নয়। ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বটে; তার প্রয়োজন হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় আমরা আস্থা রাখতে চাই। প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যেও আমরা যে প্রবৃদ্ধির হার ধরে রেখেছি, তা টেকসই করায় হরতালের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে এবং গণআকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাবে বলে আমরা আশা করব।
 

No comments

Powered by Blogger.