অস্থির রাজনীতি-মানবতাই মুখ্য থাকুক

রাজনীতির ঊধর্ে্ব মানবতা_ মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেওয়া মন্তব্য, যা সাহসে বলীয়ান করে, এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগায়। বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদীর লুনাকে সান্ত্বনা প্রদান করতে গিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেছেন।


আমরা আশা করব বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে শুধু নয়, সমাজ জীবনে যে যেখানেই অবস্থান করুন না কেন_ ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনে সাধ্যমতো সাড়া দিন এ আহ্বানে। রাজনীতি বিবেকবর্জিত হয়ে পড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে মানবিক অনুভূতি ও মূল্যবোধ_ এ ধারণা ক্রমশই যেন সর্বত্র বদ্ধমূল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবাইকে তাদের দায় ও দায়বোধ স্মরণ করিয়ে দিলেন। একই সঙ্গে তিনি সরকার ও প্রশাসনের করণীয়ও বিস্মৃত হননি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ নিখোঁজ হলে তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি নয়, অন্য কোনো বিবেচনা নয়_ বরং মানবিকতাই প্রাধান্য পাবে। তার এ বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্ট সবাই একটি স্পষ্ট বার্তা পেয়ে গেছেন, এটাই ধরে নেব। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন ১৭ এপ্রিল রাতে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়েছে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। দেশব্যাপী পাঁচদিন হরতাল পালিত হয়েছে। ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঝরে গেছে কয়েকটি মূল্যবান প্রাণ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিঘি্নত হচ্ছে এবং আরও হবে, এমনই শঙ্কা। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে_ সরকারি দলের নেতাদের এ অভিযোগের পাল্টা হিসেবে বিএনপির বক্তব্য : রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে ফেলার জন্যই এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা এবং অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরও একই উদ্দেশ্যে করা বলে তাদের অভিমত। আর এ অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করতে গিয়ে উভয় পক্ষ থেকেই কেউ কেউ দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ থাকা ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কী নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবার সময় তাদের কোথায়। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তাদের সম্বিত ফিরবে। বিশেষ করে সক্রিয় হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি ইলিয়াস আলী যদি নিজেই গোপন অবস্থানে থেকে দেশে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেন, তাহলে তাকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার দায়িত্ব সরকারের। তাদের বুঝতে হবে, এ ঘটনায় গোটা দেশ উদ্বিগ্ন। রাজনীতি অস্থির থেকে অস্থির হচ্ছে। বহির্বিশ্বে সৃষ্টি হচ্ছে বিরূপ মনোভাব। ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। অবিলম্বে এ ঘটনার সুরাহা কাম্য। এ ক্ষেত্রে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে থাকা চাই সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, অন্তত ১২টি বড় ধরনের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু তাতেই নাগরিক জীবনে স্বস্তি মিলছে না। পরিবারের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোনো পরিবারের কোনো সদস্য কিছু সময় যোগাযোগের বাইরে থাকলেই শঙ্কা জাগে_ অমঙ্গলের অশনিসংকেত শোনা যেতে থাকে। এর অবসান ঘটাতেই হবে। একই সঙ্গে বিবেকবান ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সবার প্রতি আহ্বান_ যে কোনো পরিস্থিতিতে মানবিক আবেদন ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখুন। তাতে এমনকি অনেক জটিল সমস্যারও সমাধান সহজ হয়ে যাবে।
 

No comments

Powered by Blogger.