পবিত্র কোরআনের আলো-হালাল হবে না বিধবা নারীদের জোর করে উত্তরাধিকারের আওতায় নিয়ে আসা

১৮. ওয়া লাইছাতিত্ তাওবাতু লিল্লাযীনা ইয়া'মালূনাছ্ ছায়্যিআতি; হাত্তা ইযা হাদ্বারা আহাদাহুমুল মাওতু ক্বা-লা ইন্নী তুবতুল আ-না ওয়ালাল্লাযীনা ইয়ামূতূনা ওয়াহুম কুফ্ফা-র; উলা-ইকা আ'তাদনা লাহুম আ'যা-বান আলীমা।
১৯. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ লা-ইয়াহিল্লু লাকুম আন তারিসুন্ নিছা-আ কারহান; ওয়ালা তা'দ্বুলূহুন্না লিতাযহাবূ


বিবা'দ্বি মা আ-তাইতুমূহুন্না ইল্লা আন ইয়্যা'তীনা বিফা-হিশাতিম্ মুবায়্যিনাহ; ওয়াআ'-শিরূহুন্না বিলমা'রূফি; ফাইন কারিহ্তুমূহুন্না ফাআ'ছা আন তাকরাহূ শাইয়ান ওয়াইয়াজআ'লাল্লা-হু ফীহি খাইরান কাছীরা। [সুরা : আন্ নিসা, আয়াত : ১৮-১৯]
অনুবাদ : ১৮. আর তাদের জন্য তওবার কোনো সুযোগ নেই, যারা গুনাহের কাজে লিপ্ত আছে। এভাবেই যখন তাদের কারো কাছে একদিন মৃত্যু এসে হাজির হয়, তখন সে বলে, আমি এখন তওবা করলাম; আর তাদের জন্যও কোনো তওবা নেই, যারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল। এদের জন্য আমি কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি।
১৯. হে ইমানদাররা, তোমাদের জন্য হালাল হবে না বিধবা নারীদের জোর করে উত্তরাধিকারের আওতায় নিয়ে আসা। যা তোমরা তাদের দিয়েছ, এর কোনো অংশ তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়ার জন্য তোমরা তাদের আটক করে রেখো না। যতক্ষণ তারা প্রকাশ্যে কোনো ব্যভিচারের কাজে লিপ্ত না হয়, তাদের সঙ্গে সম্প্রীতিময় জীবনযাপন করো, এমনকি তোমরা যদি তাকে পছন্দ নাও করো, এমনও তো হতে পারে যা কিছু তোমরা পছন্দ কর না তার মধ্যেই আল্লাহ তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।
ব্যাখ্যা : ১৮ নম্বর আয়াতে তওবা কবুল হওয়ার সীমারেখা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। গুনাহর কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তওবা করলে তা কবুল হওয়ার নয়। যারা সারা জীবন গুনাহর কাজ করে একেবারে মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে তওবা করার কথা বলে, তাদের তওবা কবুল হবে না, অনুরূপভাবে কাফের বা আল্লাহর অবাধ্য অবস্থায় যারা মৃত্যুবরণ করে, তাদের তওবাও কবুল হবে না। বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে পরকালে।
১৯ নম্বর আয়াতে জাহেলি যুগের একটি ঘৃণ্য আচরণ বা প্রথা রহিত করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ আয়াতের শানে নুজুল এ রকম : জাহেলি যুগে এরূপ কুপ্রথা ছিল যে, পিতার মৃত্যু হওয়ার পর ছেলেরা বিমাতা বা পিতার অন্য স্ত্রীদের ঘরে আবদ্ধ রেখে তার ওয়ারিশি হিস্যা বা সহায়-সম্পদ ভোগদখল ও আত্মসাৎ করত। ছেলে না থাকলে ভাইয়েরা মৃত ভাইয়ের স্ত্রীদের গৃহবন্দি করে বা নানা উপায়ে কষ্ট দিয়ে তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করত। ইসলামের আগমনের পরও এই নিয়ম চালু ছিল, মুসলমানরাও তাই করত। একসময় জনৈক আনসারের মৃত্যু হলে তার ছেলেরা তার বিধবা স্ত্রীর ওপর এ রকম অত্যাচার ও ঘৃণ্য আচরণ শুরু করে। সেই মহিলা রাসুলের দরবারে হাজির হয়ে ফরিয়াদ জানালে রাসুল (সা.) বললেন, 'একটু অপেক্ষা করো দেখি আল্লাহতায়ালা এ ব্যাপারে কী ফয়সালা দেন। অতঃপর এই আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রীদের সম্মানের সঙ্গে বসবাসের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, তারা যদি কোনো অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তবে এর বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা হিসেবে সম্পদ আটক করা যাবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.